কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলায় নৌকা ঘাট থেকে উপজেলা-সদর পর্যন্ত প্রায় ১০ কি:মি রাস্তাটির অবস্থা এতটাই বিপর্যস্থ যে, প্রতিনিয়ত চিলমারী নদী বন্দর থেকে নদী পারাপার হওয়া হাজার হাজার লোকজনের এ রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়, কাদা মাখামাখি হয়ে যেতে হয়। দেশের সর্ব উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে চিলমারী নদী বন্দর থেকে রৌমারী হয়ে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা সহ দক্ষিণের অন্যান্য জেলায় যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার লোক দীর্ঘ এই নদী পারাপার করে যাতায়াত করেন। কিন্তু রৌমারী ঘাটে নৌকা থেকে নামলেই যেন মনে হয় যুদ্ধবিধস্ত কোন দেশের অবস্থায় এ রাস্তাটি, যেখানে নেই কোন রাস্তার চিহ্ন, কোনটা রাস্তা সেটা বোঝা বড় মুশকিল, রাস্তার মাঝখানের গর্ত হাটু সমান কাদা পানিতে ভরা, নৌ ঘাট থেকে পারাপার হওয়া লোকজনকে নিয়ে সদর উপজেলা যেতে হলে অটোরিকশা, ভ্যান, মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য যে ছোটখাট বাহনগুলো চলাফেরা করে সেগুলো পানির নিচে কাদায় আটকে যায়, কোন-কোনটা উল্টে পড়ে যাত্রীসহ কাদা মাখামাখি অবস্থায়ই শহরের দিকে রওনা দিতে হয়, স্থানীয় লোকজন বাধ্য হয়ে নিজেরাই নিজেদের বাড়ির সামনের রাস্তায় বালু-মাটি এনে দিলেও সেগুলো খুব বেশি স্থায়ী হয় না, কাঁদা বালুর গর্তে ভরপুর রাস্তাটি দেখার যেন কেউ নেই- স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে উপজেলা প্রশাসন প্রায় ৬ লাখ টাকার মতো বরাদ্দ দিয়ে কিছু জিও ব্যাগ ফেলে সে রাস্তাকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করে, কিন্তু তাতে তো আর রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব হয়নি, সেটা নিতান্তই অপ্রতুল, সেটাকে রাস্তা বলে কেউই মনে করেননা।
স্থানীয় বাসিন্দারা আক্ষেপ করে বলেন, ” আল্লাহর দুনিয়ায় আমাদের দেখার মতন কেউ কি নেই, একজন তো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’-র সে কথাটা স্মরণ করিয়ে দেন ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে, রৌমারী এলাকায় তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না” এ কথাটি দিয়ে বুঝিয়ে দেন- এলাকার নদী পাড়ের মানুষ সেই পদ্মানদীর মাঝির গল্পের মত জীবন নিয়ে হাজারো দুঃখ দুর্দশা কষ্ট বিড়ম্বনা নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছেন, তারা রাষ্ট্রের উন্নয়ন চোখে দেখেন না, জানেন না, সরকার দেশের উন্নয়ন কতটা করেছে এমনকি তারা বলেন, উন্নয়ন কাকে বলে, দেশে যেভাবে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে তার ছিটেফোটাও আমাদের এখানে নেই, তাদের মতে, শুধু আমাদের রৌমারীর অবস্থাই এমন এটা নয়, রাজীবপুরের নদী পাড়ের এলাকার লোকজনও একই রকম অবস্থায় আছে, আমাদের কথা যদি কেউ শুনতে পায়- স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমপি, মন্ত্রী মহোদয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আপনারা আসুন, দেখুন, আমাদের রাস্তাঘাটে যদি আপনাদের গাড়ি চলে তাহলে বুঝবেন যে আমরা মিথ্যা কথা বলছি,” এসব দুঃখের কথা এবং আফসোসের কথা বলে এলাকাবাসীর আকুতি জানালে সরেজমিনে দেখে তাদের অবস্থা কতটা দুর্দশাগ্রস্ত ও কষ্টকর তা বুঝতে আর বাকি থাকে না। তাদের দাবি, তারাও এদেশেরই নাগরিক হিসেবে বিমাতা সুলভ আচরণ কেন পাবেন,দেশের অন্যান্য এলাকার মতো তাদের এলাকার রাস্তাঘাট গুলোর উন্নয়ন করবে সরকার এই প্রত্যাশা করেন এলাকার সাধারন জনগন।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আল ইমরান জানান, “আসলে ওই রাস্তার জন্য ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ খুব বেশি নয়- এটা আমরাও জানি কিন্তু জরুরী ভিত্তিতে রাস্তা যাতে কোনোভাবেই চলাচল অযোগ্য না হয় এ কারণে ওই বরাদ্দ মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে দেয়া হয়েছে, আশার কথা হচ্ছে, মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, রাজিবপুর থেকে দাঁতভাঙ্গা পর্যন্ত এবং নদীর ঘাট থেকে ৮ কিলোমিটার রাস্তা এলজিইডির নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট এর ভিত্তিতে রোডস এন্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্ট আসন্ন শীতকালে কাজ শুরু করবে বলে আশা করা যায়”। এলাকার উন্নয়নের জন্য কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন মহোদয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি হয়তো বা ব্যস্ত থাকায় ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার উদ্যোগের প্রশংসা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আল ইমরান জানান যে, মন্ত্রী মহোদয় এ ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস এবং আশা করা যায় তিনি দ্রুত এ কাজগুলো করে এলাকাবাসীর দুঃখ-দুর্দশা দূর করবেন ।