চাঁদপুরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভূমিহীন পরিবারের মাঝে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ।
গতকাল ১৮ই জুন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় করা হয়।
এ সময় জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চঘাট, যাত্রী ছাউনীতে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এমন ভাসমান কিছু মানুষ রয়েছেন। যাদেরকে শত চেষ্টা করেও ঘরে ফেরানো যায় না। আমি এরকম কয়েকটি লোককে নিজে গিয়ে অনেক বুঝিয়েও ঘরে ফেরাতে পারিনি। এ ছাড়া বাহিরের জেলার অনেক ভাসমান লোক এ জেলায় রয়েছেন। তাদের ভোটার আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন না থাকায় বা অন্য জেলার হওয়ায় এ জেলায় ঘর করে দেওয়া যাবেনা।
জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ সাংবাদিকদের আরও জানান, আগামী ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন ২য় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩’শ ৪০টি ভূমিহীন ও গৃহহীণ পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদানের কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যে ১ম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ১’শ ৮৯ জনকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, খাস জমি উদ্ধার করে এ জেলায় পূর্নবাসন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ‘ক’ শ্রেণির পরিবারকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুর্নবাসনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পূনর্বাসন বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দকে জায়গা নির্বাচন, মাটি ভরাটসহ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের বেতনের টাকায় চাঁদপুর জেলায় ২টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রতিষ্ঠান প্রধান, সংস্থা, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর জেলায় ১’শ ১৮টি ঘর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ২টিসহ মােট ২৫টি ঘর ইতােমধ্যে নির্মিত হয়েছে।
তাছাড়া চাঁদপুর জেলায় নিষ্কন্টক কৃষি খাস জমি অপ্রতুল হলেও জেলার ৪ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ২টি করে জেলার ৮ উপজেলায় নিষ্কন্টক খাস জমি খুঁজে বের করাসহ এ সংক্রান্ত সকল কাজ মনিটরিং করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে চাঁদপুর জেলায় ‘ক’ শ্রেণির গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৬’শ ১৭ টি। চাঁদপুর জেলায় ১ম পর্যায়ে একক গৃহের মাধ্যমে ১’শ ১৫টি এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৫টিসহ মােট ১’শ ৬০টি পরিবারকে পূনর্বাসন করা হয়েছে।
২য় পর্যায়ে একক গৃহের মাধ্যমে ২০ জুনের মধ্যে ৯৩টি এবং পরবর্তীতে ১৬টি মােট ১’শ ৯টি পরিবারকে এবং ৩’শ ২৫টি পরিবারকে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সর্বমােট ৪’শ ৩৪ টি পরিবারকে পূর্নবাসন করা হচ্ছে। এ সকল পরিবারকে এক টাকা সালামীতে দুই শতক জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে।
কবুলিয়ত, রেজিস্ট্রেশন, নামজারী ও জমাখারিজ খতিয়ান সৃজন, সনদপত্র প্রদানসহ সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক ডিসি আর এর ১ হাজার ১শ ৫০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি একক গৃহের আয়তন ৩’শ ৯৫ বর্গফুট। দুইকক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা গৃহে একটি টয়লেট, একটি রান্নার কক্ষ ও একটি ইউটিলিটি স্পেস রয়েছে।
চাঁদপুর জেলায় ১ম পর্যায়ে গুচ্ছগ্রাম হতে ৮৫টি আশ্রয়ন হতে ২০টি এবং দুর্যোগ হতে ৩০টি অর্থাৎ মােট ১’শ ৩৫টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া যায় এবং এগুলাে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এই মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক( সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. দাউদ হোসেন চৌধুরী, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, গোলাম কিবরিয়া জীবন, শরীফ চৌধুরী, বিএম হান্নান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, এ এইচ এম আহসানুল্লাহসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এর আগে জেলার প্রত্যেকটি উপজেলার কাজের অগ্রগতির খণ্ডচিত্র স্কিনে সাংবাদিকদেরকে দেখানো হয়।