ফরিদ মিয়া নান্দাইল ময়মনসিংহঃ
বাঙ্গালির প্রধান খাদ্য ভাত। আর ভাতের পরই পুষ্টি গুণে অন্যন্য গম থেকে প্রস্তুত আটা ও ময়দা সহ নানা ধরনের পুষ্টিকর খাবার। দ্বিতীয় খাদ্যের চাহিদা বেশী হিসাবে গমই এ দেশের একমাত্র অবলম্বন ছিল। যুগের পরিবর্তনের পাশাপাশি গম চাষাবাদে বিভিন্ন সমস্যা ও কম দামে বিক্রী হওয়ার কারনে নান্দাইলেও গম চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছে। ধান চাষের পাশাপাশি বেশী লাভের আশায় শাক-শ্ববজি সহ অন্যান্য কৃষি ফলনে আগ্রহ বৃদ্ধি হওয়ায় দিন দিন গম চাষ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া শুকনো মৌসুমে সেচের মাধ্যমে চাষীরা ধান চাষ করতে পারায় গম চাষের দিকে ঝুকঁছেন না। কারন গম চাষে ছত্রাকবাহী ‘ব্লাস্ট’ নামক বিভিন্ন রোগের আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্থ সহ থাকেনা ভালো বাজার দর। ফলে প্রতিবছরই গম চাষের পরিমাণ কমতে কমতে বর্তমান মৌসুমে নান্দাইল উপজেলার মাত্র ৯০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ করা হয়েছে। যেখানে প্রায় ৮/১০বৎসর আগে ২/৩ শতাধিক হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হতো। তবে এবার গমের বাম্পার ফলন হলেও বাজার দর না থাকায় চাষীরা তেমন খুশী নয়। তবে নিজ পরিবারে খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই প্রয়োজনে গম চাষ করেছে অনেক কৃষকই। কৃষকরা মনে করেন গম চাষের চেয়ে অন্য ফসল চাষ করে তুলনামূলকভাবে অনেক লাভ হয়। সে জন্য গমের পরিবর্তে অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। উপজেলার মুশুল্লী, মোয়াজ্জেমপুর, খারুয়া, গাংগাইল, চরবেতাগৈর ইউনিয়ন এলাকায় স্বল্প পরিসরে গমের চাষ দেখা গিয়েছে। আফজাল হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, “বর্তমানে বাজারে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২-৫০ টাকা, এক কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫-২৬ টাকা। বাজারে আটার দাম কম থাকায় গমের আবাদ দিন দিন ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি। কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, গমে চাষে লোকসানে পড়তে হয়। তাই গত ৫ বছর ধরে ভুট্টা চাষ করছি। ভুট্টায় লাভ বেশি। চাষী আশরাফ উদ্দিন বলেন, গম চাষে আগ্রহ নেই। তাছাড়া ভুট্টা চাষে তেমন শ্রমিকও লাগে না। অন্যান্য খরচও কম। ফলে লাভবান হওয়া যায়। উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরণ কর্মকর্তা জানান, গম চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গম চাষে প্রদর্শনী প্লট তৈরী করা হয়েছে। তবে গম চাষের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম। ফলন ভালো হয়। উৎপাদন খরচও কম। তাই চাষীরা গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তবে এ বছর বিআর ২৬, ২৭, ২৮, ৩০ ও ৩৩ জাতের গম চাষ করা হয়েছে ফলনও ভালো হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান জানান, অফিস থেকে কৃষকদেরকে বিনামুল্যে গমের বীজ ও সার দেওয়া হয়। এছাড়া আমরা চাষিদের গম চাষের জন্য সব সময় উৎসাহিত করে যাচ্ছি। কিন্তু মাড়াইয়ের সমস্যা, ইঁদুরের উপদ্রব, গমের চেয়ে অন্য ফসলে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা গম চাষ থেকে সরে আসছেন। ফলে ক্রমান্বয়ে কমতে শুরু করেছে গম চাষ। তবে গমের আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।