শেরপুরে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাসে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। গত রোববার বিকেলে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাস বয়ে যাওয়ায় শেরপুর সদরসহ পাঁচটি উপজেলাতেই উঠতি বোরো থুর ধানের শীষ সবুজ থেকে সাদা হয়ে ওই ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী ছোট্ট উপজেলা ঝিনাইগাতীতে তুলনামূলকভাবে ওই ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বেশি। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় মোট ১৮৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পুরো জেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাস বয়ে যায়। সেইসাথে কোন কোন এলাকায় শিলাবৃষ্টিপাতও হয়। এতে কোন কোন এলাকায় বাড়িঘর,গাছপালা ও বৈদ্যুতিক লাইনের ক্ষয়-ক্ষতির পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই চলতি বোরো ধুর ধানের সবুজ থেকে সাদা হয়ে ধানের শীষ নষ্ট হয়ে গেছে । এতে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা আবাদের ফলন না পাওয়ার আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন।
সদর উপজেলার দমদমা কালিগঞ্জ এলাকার কৃষক জিন্নাহ আলী বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় এমন গরম বাতাস উঠেছিল যে, বাহিরে থাকা যায়নি। ঘরেও খালি গায়ে থাকতে কষ্ট হয়েছে। এ গরম বাতাসে আমাদের বোরো ধান সব শেষ। এখন আমরা সারা বছর কি খাবো তা নিয়েই ভাবছি।এদিকে ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বোরো ফসল পর্যবেক্ষণ করেছেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুর (ব্রি)-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ পান্না আলী, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কাজী শিরিন আক্তার জাহান, উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হীরেন্দ্র নাথ বর্মণসহ অন্যান্যরা। ওই বিষয়ে (ব্রি)-এর কীটতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ পান্না আলী বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের আহ্বানে আমরা একটি পর্যবেক্ষণ দল এসেছিলাম। পর্যবেক্ষণ শেষে ও কৃষকদের ভাষ্যমতে, কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে ৩৭ থেকে ৪০ তাপমাত্রার গরম বাতাস হওয়ার কারণে ধান শীষগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, উপজেলায় চলতি বছর ১৩ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে গরম বাতাস হওয়ায় উপজেলার নলকুড়া, রাংটিয়া, ডেফলাই, কাংশা, নওকুচি, গান্ধীগাঁও, জামতলী, হালচাটি, বগাডুবি এলাকার ৫০ হেক্টর জমির উঠতি বোরো ধানের যেগুলোতে শীষ এসেছে সেগুলো চিটায় পরিণত হয়ে সাদা হয়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে কিনা, নিরুপণে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে।এ ব্যাপারে জেলা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, কয়েকদিন আগে ঝড়ো ও গরম বাতাসে পুরো জেলায় ১৮৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য জেলায় যেরকমভাবে ধানক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে তুলনায় এ জেলায় তেমন বড় ক্ষতি হয়নি। তার তথ্যমতে, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৯০ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত রক্ষা পেলে বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করেন তিনি।