ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন ৯নং শুভপুর ইউনিয়ন ১.২.৩ নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার নাজমা হায়দার এর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। তাদের অভিযোগ বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভবতী ভাতা এমন কোনো ভাতা নেই যেখান থেকে এই ইউপি সদস্য নাজমা হায়দার কমিশন নেন না৷
উপকারভোগীরা কার্ড করার জন্য কখনো ভাতার পুরো টাকা, কখনো অগ্রিম টাকা, কখনো বা ভাতার টাকার একটি অংশ দিতে বাধ্য হন ওই ইউপি মহিলা সদস্যকে৷
ইউনিয়নের বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা৷ টাকা না দিলে কার্ড করে দেন না বলেও অভিযোগ করেছেন তার এলাকার ভোটাররা।
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য কার্ড পাওয়ার আগে ও পরে ৩/৫ হাজার টাকা না দিলে এই নারী ইউপি সদস্য কার্ড বাতিল করার হুমকিও দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে তার হেনস্তার শিকার হতে হয় সাধারণ জনগণের।
ইউনিয়নের বাসিন্দা বিধবা নার্গিস সুলতানা বলেন, আমি বিধবা কার্ড ভাতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু ভাতা পাই না। মেম্বারনির কাছে গেলে তিনি বললেন, ভাতা করে দেব, কিন্তু ভাতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ৬ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। তারপর অনেক দিন ঘুরাঘুরি করেও কার্ড পাইনি। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর গেলে তিনি আমার সকল কাগজপত্র দেখে বিধবা কার্ড বানিয়ে দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
ফাতেমা বেগম’র পক্ষে ছেলে মোঃ রুমন জানান, আমার মায়ের জন্য বিধবা কার্ডের জন্য গেলে ইউপি সদস্য নাজমা হায়দার আমার কাছে ৩ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। টাকা নিলেও অবধি আজো কোন বিধবা কার্ড দেয় নাই। তাকে বললে আজ কাল বলে সময় ক্ষেপন করে চলছে। রত্না বেগম জানান, আমাকে বিধবা কার্ড দিবে বলে ৩ হাজার টাকা নিয়ে যায়। সৈয়দা আর্জিনা, বিবি ফাতেমা বলেন, আমরা নিজ হাতে মেম্বারনির হাতে নগদ ৩+৩=৬ হাজার টাকা তুলে দেই। দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোন কার্ডের হদিস নেই। ফাহমিদা সুলতানা জানান, বয়স্ক ভাতার জন্য নগদ ৬ হাজার টাকা তুলে দেই ইউপি সদস্য নাজমা হায়দার’র হাতে। রাবেয়া আক্তার জানান, বিধবা কার্ড বানানো হলে ইউপি সদস্যকে সম্মানি করতে বলেছে। লিলি আক্তার ও সাহেনা আক্তার নামক দুই ভুক্তভোগী জানান, বিধবা কার্ডের জন্য আমরা নিজ হাতে মহিলা মেম্বার নাজমা হায়দার’র হাতে নগদ ৫+৫=১০ হাজার টাকা তুলে দেই। ননীবালা (৯০) জানান, আর কত বছর হলে বয়স্ক ভাতা পাবো জানিনা। মেম্বারনির কাছে গেলেও কোন কর্ণপাত করেনাই আমরা গরীব বলে। মালতি নামক আরেক ভুক্তভোগী জানান, বিধবা কার্ডের জন্য ৪ হাজার টাকা দিয়েছি অবধি আজ পর্যন্ত কোন কার্ড দেয় নাই। এটা সম্মানি নাকি গরীবের উপর জুলুম প্রিয় পাঠক এই বিচার আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, আমরা গরিব মানুষ। ভাবলাম, কিছু টাকা দিয়েও যদি কার্ড পাই, অসুবিধা কী। পরে মেম্বারনিকে বলেছি, ভাতার টাকা পেলেই ৪/৫ হাজার টাকা দিব। পরে কয়েকজনকে এই শর্তে কার্ড করে দেন।
মহিলা সংরক্ষিত ইউপি সদস্য নাজমা হায়দার’র বিরুদ্ধে ভাতা কার্ড সংক্রান্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে হেনস্তার স্বীকার হয় বলে জানান এলাকাবাসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান, মহিলা মেম্বার’র স্বামী নুরুল হুদা হায়দার শুভপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়াতে দলকে ব্যবহার করে গরীবের হক মেরে খাওয়ার মত অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। টাকার বিনিময়ে স্বামী থাকা অবস্থায় বিধবা কার্ড তৈরী করে দিয়েছে এই মহিলা ইউপি সদস্য।প্রতিবাদ করলে অপমান সহ মামলা হামলা ও হেনস্তার স্বীকার হতে হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মহিলা ইউপি সদস্য নাজমা হায়দার বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনো ভাতার কার্ড করার জন্য কারো কাছে টাকা-পয়সা চাইনি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
শুভপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আবদুল্লাহ সেলিম জানান, ভুক্তভোগীরা যদি আমার কাছে অভিযোগ দায়ের করে তাহলে তদন্ত করে দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই মহিলা মেম্বার নাজমা হায়দার’র বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া তাহের চৌধুরী বলেন, আমার কাছে কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে আমি অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। সত্যতা পাওয়া গেলে ওই মহিলা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷