ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষের শুরু ,কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই তা সবচেয়ে ব্যাপক সহিংস রূপ নিয়েছে।
১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গেছে তার মধ্যে ৮ জনই এই জেলার। সেখানে গতকাল সারা শহরের বহু সরকারি দপ্তর, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ঠিক কি ঘটেছিল যার ফলে সেখানে এতটা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হল?
ছবি সংগ্রহ
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বনিক পাড়ায় নিজেদের ঘরের ভেতরে আগুনে পুড়ে মৃত্যুর আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল একটি পরিবার।
দুই সন্তানের জননী পরিবারের গৃহকত্র্রী তার ঘরে গতকালের হামলার বর্ণনা করে বলছিলেন, “আমরা ভবনটির নিচের তলায় থাকি। আমাদের এসে বলেছে আপনারা বের হয়ে যান, আমরা আগুন দিয়েছি।
কিন্তু দরজা খুলে বের হবো সেই সাহস হচ্ছিল না। দরজার সামনেই আগুন।”
ভবনের বাইরে বের হতে না পেরে ৯০ বছর বয়সী শাশুড়িকে তিনি ও তার স্বামী পাজাকোলা করে পাঁচতলা ভবনের ছাদে উঠে যান।
আগুন ও”ধোয়ায় পুরো ভবন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। আমার একটি বাচ্চা প্রতিবন্ধী। ধোয়ার মধ্যে বাচ্চাদের খুঁজে পাচ্ছিলাম না
ছবি সংগ্রহ
গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে যে ধরনে সহিংসতা দেখা গেছে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রের সাথে তুলনা করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
তিনি বলছিলেন, “হামলাকারীরা এমন একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির লোকজন সবাই মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।
যে ধরনের হামলা হয়েছে অন্য অনেক জেলা শহরের মতো একটি সড়ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। সড়কটির নাম টি-এ রোড।
শহরের যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তার সব কিছুই এই সড়কের দুই ধারে অবস্থিত।
স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা গেছে টি-এ রোডের দুই ধারে জেলা সদরের পৌর সভা, শিল্পকলা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, পৌর মিলনায়তন, ভূমি অফিস, প্রেস ক্লাব ছাড়াও আরও বেশ কিছু সরকারি ভবনে একে একে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। বেলা এগারোটা থেকে চলতে থাকে তাণ্ডব।
একটি ট্রেনে হামলা করা হয় যেটি এর আগের দিন পুড়িয়ে দেয়া রেল স্টেশন পার হচ্ছিল।
আর এক প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এক আইনজীবী বর্ণনা করছিলেন শহরের কালী মন্দিরে তিনি কি দেখেছেন।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা।”কালীমন্দিরের দিকে গিয়ে দেখি সেখানে লুটপাট চলছে। লুটপাট বলতে মন্দিরের মূর্তিগুলো ভাঙা হচ্ছে আর দান বাক্সগুলো খোলা হচ্ছে এবং কোথাও কোন স্থানে পুলিশ ছিল না।
তারা থানাতেই অবস্থান করছিল। দুইটা জল কামান ছিল সেই দুটো পুড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এগুলো রক্ষায় তাদের কোন সেলফ ডিফেন্স ছিল না। এই সবকিছুর ভিডিও আছে আমাদের কাছে।”
রবিবারের সহিংসতার সূত্রপাতের সুএ
জেলার একশ বছরের পুরনো জামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে হামলা করা হয়েছে বলে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরাও এধরনের একটি হামলার কথা উল্লেখ করে বলছেন, এতে সেখানে আরও বেশি ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে গত তিন দিনের সহিংস বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।