সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচনে বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের বার বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুর রহমান মফুর কে এমপি পদে দেখতে চাওয়া নিয়ে স্যোসাল মিডিয়া, ব্যানার-পেষ্টুনে, হাটে-বাজার, গ্রামাঞ্চলে, চায়ের আড্ডায়, প্রবীন রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড়।
স্যোসাল মিডিয়াতে তাঁর ইতিবাচক দিক গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন তাঁর অনুসারীরা। অন্যদিকে হাটে-বাজারে গ্রাম-গঞ্জে মানুষের মুখে সুনামে মুখরিত হচ্ছেন মোস্তাকুর রহমান মফুর। তাঁর সম্পর্কে আলাপকালে অনেকেই ইতিবাচক দিক টেনে বলছেন, মফুরের মত যোগ্য সৎ ও দূর্নীতি মুক্ত রাজনৈতিক নেতা কে একবার হলেও সংসদে দেখতে চাই।
অনুসারীরা ছাড়াও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের আলাপ কালে তাঁরা বলেন, মফুর ভাই ছাড়া কাউকে নৌকা দিলে উঠার আগেই পা ফর্শে যাবে। সিলেট-৩ এ এখন নৌকা পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন একমাত্র মোস্তাকুর রহমান মফুর।
প্রবীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৯৭৪ সালে সেই সিলেট শাখার ছাত্রলীগের সদস্য থেকে অদ্যাপি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে এখনো মূল সংগঠন আওয়ামী লীগের সাথে আছেন। যখন শেখ মুজিব বালাগঞ্জে আসেন তখন কেউ তাকে চিনে নি চিনেছিলেন চেয়ারম্যান পিতা মরহুম মখলিছুর রহমান সাহেব। গরমে অচেনা লোকটা অচেনা স্থানে ঘেমে নাজুক অবস্থা, তখন বঙ্গবন্ধুর হাতে শরবত তুলে দিয়েছিলেন সেই মখলিছুর রহমান। আমাদের একটাই চাওয়া একদিনের জন্যে হলেও প্রধানমন্ত্রী- আপনার পিতার সহচরদের হাতে গড়া রাজনৈতিক মানুষটাকে সংসদে দেখতে চাই।
অন্যজন বলেন, হয়তো সারা জীবনের সততা এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতির সঠিক মূল্যায়নের সময় এসেছে। জাগো বিবেক জাগো। চায়ের আড্ডায় মাথা-মাথি (কথোপকথন) মফুর সাবের মত মানুষ দরকার কিন্তু টাকা যে নাই টিকেট পাবে কেমনে ? সারা জীবন রাজনীতি করে ভাইদের হাতের দিকে থাকাতে হয়, থাকাতে হয় পৈতৃিক সম্পদের দিকে। রাজনীতি করে তো একটা বাড়িও বানাতে পারেননি। অন্যরা তো রাজনীতি কে পুঁজি করে কোটি টাকার বাড়ি গাড়ির মালিক।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে, সিলেট-৩ আসনের সদর এলাকার কয়েকজনের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, তোমাদের কাছে মফুর, কিন্তু আমাদের কাছে মোস্তাক। শুনো মোস্তাক কে, ১৯৮১ সালে সামরিক শাসন চলাকালীন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী ভারত থেকে দেশে ফিরে আসেন। পিতৃহারা দু’বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন সিলেটে এসেছিলেন হযরত শাহ জালাল এর মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। তখন আওয়ামীলীগ বলে পরিচয় দিয়ে সামনে দাঁড়ানোর মতো লোক সারা দেশের মতো সিলেটেও খুব কম ছিলেন। সেদিন আমাদের প্রয়াত নেতা ইফতেখার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে ওই মোস্তাক এর মতো হাতেগুণা কয়েকজন যুবক নিজের প্রাণের বিনিময়ে প্রিয় নেত্রীর প্রাণ রক্ষার শপথ নিয়ে সেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে গার্ড দিয়েছিলেন। মাজার প্রাঙ্গনে মাত্র কয়েকজন লোক দেখে নেত্রী অশ্রুসিক্ত নয়নে ভারাক্লান্ত মন নিয়ে বলছিলেন, এখনও এই সিলেটে আমার বাবাকে, আমাদেরকে বা আওয়ামীলীগকে তোমারা এতো ভালোবাসো ? এই নিবেদিত মানুষেরাই ছিলো সেদিনের শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার প্রিয়জন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সনে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সদস্য হোন। পরে বালাগঞ্জ থানা যুবলীগ এবং জেলা যুবলীগের সফল নেতা হিসেবে সিলেটের যুব সমাজের মডেল স্বরূপএক অবিচ্ছেদ্য নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত মোস্তাকুর রহমান মফুর ১৯৮৭ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং টানা ২২ বছর তিনি ৪টি নির্বাচনে (অপরাজিত) নির্বাচিত হন। মানুষের ভালোবাসা তাঁর প্রতি দিন দিন কীভাবে বেড়েছে এর নজীর পাওয়া যায় তাঁর নির্বাচনের ধারাবাহিক বিজয়ের চিত্র দেখে, প্রতিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের সাথে তাঁর ভোটের ব্যবধান বেড়েছে। উল্লেখ্য যে, প্রথম নির্বাচনে মাত্র ৯৮ ভোটের স্বল্প ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হন এবং শেষ ইউনিয়ন নির্বাচনে (২০০৩ সালে) ব্যবধান দাঁড়ায় প্রায় ২৬০০ ভোট। ১৯৯৬ সালে তিনি সিলেট জেলার শ্রেষ্ট চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। একই সালে তৎকালীন বালাগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। একই সনে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরাম (বিইউপিএফ) এর মহাসচিব নির্বাচিত হয়ে তিনি সারা বাংলাদেশ ব্যাপী ইউপি চেয়ারম্যানদের এই সংগঠন পরিচালনায় তাঁর যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধা ও সততার পরিচয় দেন। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মোস্তাকুর রহমান মফুর ২৯ হাজারেরও অধিক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। পরিশেষে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ও প্রতীক নিয়ে ১৮হাজার ৯শ ৯৮টি ভোটে ব্যবধানে বিজয়ী হন।