আকাশ সরকার ‘রাজশাহী ব্যুরোঃ
রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ ‘ এই কথাটি অনেকটাই এখন যেন বাঘ আর রাখালের গল্পের মত ফিকে হয়ে গেছে। বার বার শুনতে শুনতে বিরক্ত সবাই কিন্তু মর্ম কথা বাস্তবায়নে সবারই রয়েছে নানান অজুহাত।
ঠিক যেমন ঢাকা কাশিমপুর-১ কারাগারে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বাইরের এক নারীর সঙ্গে এক বন্দির অন্তরঙ্গ মূহুর্ত কাটানোর ভিডিও আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠে দেশজুড়ে। কিন্তু তারপরেও মর্মকথা অনুধাবন করতে পারছেনা দেশের অনেক কারাগার।
সরকার কারা আইনে অনেক প্রশংশসনীয় নতুন নতুন সংযোজন এনেছে কিন্তু তারপরেও জনমনে প্রশ্ন জেগেছে – পুরো কারা ব্যবস্থাই কি তাহলে এখন দুর্নীতির কবলে দূর্নীতিগ্রস্থ ?
এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সার্বিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটলেও কিছু কিছু দূর্নীতি যেন গলার কাঁটা হয়ে আছে এখনও। অবশ্য সারা দেশে কারা দূর্নীতির মূল হোতারা যখন একে একে ধরা পড়ছে ঠিক তখন কারাগারে পাল্টেছে দূর্নীতির এখন পাল্টেছে দূর্নীতির ধরন ও গড়ন।
ঘটনাসূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের ১ তারিখে রাজশাহী দামকুড়া থানার অধীনে গ্রেফতার সুমন নামের এক আসামী কারাগারে যান।
রাজশাহী কারাগারে যাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যান সুমন কিন্তু তারপরেও তার ভাগ্যে জুটেনি কারা হাসপাতাল।পরের দিন সুমনের সাথে দেখা করতে আসা তার বন্ধু মিনারুলকে দিয়ে মেডিকেল কারাগারে থাকার ব্যবস্থা করতে বলেন।
এসময় সুমনের বন্ধু মিনারুল কারাগারেই এক জেল বাবুকে মেডিকেলে থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই ঐ জেল বাবু হাবিব নামের আরেক জেল বাবুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন মিনারুলের। এরপর জেল বাবু হাবিব মিনারুলের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা দাবি করেন এবং আশ্বাস দেন টাকা দিলেই মেডিকেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন এবং সেই সাথে মেডিকেলে পর্যাপ্ত খাবার ব্যবস্থাও।
পরের দিন মিনারুল ৮ হাজার টাকা জেল বাবু হাবিবকে দিয়ে আসার পরপরেই হাজতী আসামী সুমনকে আমদানী ওয়ার্ড থেকে সরাসরি কারা হাসপাতালের ৫ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে নেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
দেড় মাস পর জামিন পাওয়া মাত্রই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এসকল অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন সুমনসহ ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত হাজতী।
রাজশাহী কারা হাসপাতালে থাকা সুমন সাংবাদিকদের জানান – রাজশাহী কারা হাসপাতালে ৩৪ জন বন্দীর ভেতরে ২৭ জন বন্দীই মাসিক টাকা দিয়ে ভর্তি থাকেন এই মেডিকেল ওয়ার্ডে।
এরপর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এই সকল দুর্নীতির তথ্যর সত্যতা যাচাঁইয়ের জন্য সুমনের দেয়া তথ্য অনুসারে এক পর্যায়ে অনুসন্ধানে নামেন সাংবাদিকরা।
এ সময় সাংবাদিকরা সুকৌশলে নাম-পরিচয় গোপন করে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অন্য এক সুস্থ হাজতীর অভিভাবক পরিচয় দিয়ে কারা হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল বাবু হাবিবের কাছে মুঠোফোনে তদবির শুরু করেন।
এরপর সাংবাদিকরা জেল বাবু হাবিবের ব্যাক্তিগত +8801738659394 মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলে জেল বাবু হাবিব কারা হাসপাতালের ডাক্তারকে দেয়ার জন্য সাংবাদিকদের কাছে ৫৫০০ টাকা দাবি করে বসেন।
উল্লেখ্য যে, সাংবাদিকরা জেল বাবু হাবিবের সাথে কথোপকথনের পুরো অডিও রেকর্ডিং সংরক্ষন করে রাখেন।যা উক্ত সংবাদের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
পরবর্তিতে গত ১৪/০৩/২০২১ ইং তারিখে অডিও রেকর্ডিং এর বিষয়টি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তারেক কামালকে অবগত করা হলে ঐ জেল বাবু যে হাবিব তাও সনাক্ত করতে পারেন জেলার এবং সাংবাদিকের জানান জেল বাবু হাবিবের ব্যাচ নাম্বার ২৮৩৭।
অবশ্য অদ্যবধি এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি জেলার তারেক কামাল।কিংবা ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাসও দেননি সাংবাদিকদের।
কিন্তু এদিকে সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করলে সন্দেহের অবকাশ থাকেনা যে, জেল বাবু হাবিব প্রতারনা কিংবা হাজতী আসামীকে কোন ভয় ভীতি দেখিয়ে এই টাকা দাবি করেননি বরং স্পস্টই প্রকাশ পায় যে, জেল বাবু হাবিবের সাথে মেডিকেল ডাক্তারের সখ্যতা আছে বিধায় কারা হাসপাতালে সুস্থ রোগীও অসুস্থ হিসেবে ভর্তি করা যায়।
আরোও উল্লেখ্য যে, একটি জেলখানার জেলবাবুর এই ক্ষমতা নেই যে, একজন সামান্য জেলবাবু কোন হাজতী বা কয়েদিকে তার ইচ্ছামত তার পছন্দমত স্থানে নিয়ে যাবেন। কারন জেলখানার কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতীত কোন আসামীর স্থান পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে যে, জেলার,সুপার কিংবা কারা হাসপাতালের ডাক্তার সামান্য বেতনে চাকরী করা বাবুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন তা সহজেই অনুমেয়।
তবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এই সকল অনিয়ম- দূর্নীতির সংবাদগুলোর বিষয় নিয়ে রাজশাহীতে মাঠে কাজ করা সক্রিয় মানবাধিকার সংগঠন ব্লাষ্ট, লিগ্যাল এইড একশনসহ অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী শহর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের কিংবদন্তী নেতা জামাত খান বলেন- বন্দীরা অসহায়, তাদের সাথে অমানবিক আচরন কারোর কাম্য নয় বরং বন্দীদের নিয়ে যারা বানিজ্য করে তারা অমানুষ। বিধায় আমরা শিক্ষা নগরী রাজশাহীকে দূর্নীতিগ্রস্থ নয় বরং আমরা চাই গ্রীন এন্ড ক্লিন রাজশাহী গড়তে।