লক্ষ্মীপুরের রামগতির দরিদ্র ইউসুফ মিস্ত্রি হাতে বানানো উভয়চর ইঞ্জিনচালিত নৌকা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌছাতে স্বপ্ন দেখেন। গত ৩ বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করে তৈরি করা ‘জল ডাঙা মুজিব পরিবহন’ নামের নৌকার বিশেষত্ব হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত এবং অত্যাধুনিক সাজসজ্জা ও কারুকার্যে শোভামণ্ডিত।
রামগতির ২ নং বিশ্ব কলোনীর আবুল কালাম মিস্ত্রি বাড়ির দরিদ্র আবুল কালামের ছেলে কাঠমিস্ত্রি ইউসুফ। তার দাদা আরব আলী মিস্ত্রি ছিলেন ১৯৭২ সালে রামগতিতে আগত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ‘শেখের কেল্লায়’ মাটি কাটার শ্রমিক। তৎসময় থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি এই দরিদ্র অসহায় পরিবারের ভালোবাসা আওয়ামীলীগ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠ কর্মী থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দিনমজুর ইউসুফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি নৌকা উপহার দিতে চান। স্থানীয় কামাল পাশা নামক এক ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে মাত্র ৫০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করেন নৌকা বানানোর কাজ। নিজের সকল সহায় সম্বল শেষ করেও নৌকা বানানোর কাজ যখন শেষ হচ্ছিল না তখন ঋণ নিতে বাধ্য হন ইউসুফ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি গভীর অনুরাগের ফসল গত ৩ বছর ধরে নিরলশ পরিশ্রম করে গড়ে ওঠে এই উভয়চর ‘জলডাঙ্গা মুজিব পরিবহন’ নৌকা।
১৮ আসন বিশিষ্ট এই নৌকা পানিতে যেমন ভেসে চলতে পারে তেমনি সড়কপথে নির্ধিদায় চলতে পারে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে হাতে বানানো ভিন্নধরনের এই নৌকা লক্ষ্মীপুর থেকে সড়কপথে ঢাকায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেন নৌকা মিস্ত্রি ইউসুফ।
স্থানীয় রাজু হাওলাদার নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন- ‘আমরা খবর শুনে দেখতে আসছি। ইউসুফের মেধা প্রতিভা দেখে আমরা অবাক। তার যে ইচ্ছা সে যে প্রধানমন্ত্রীকে এই নৌকা উপহার দিতে চায় তাতে আমরা সত্যিই আনন্দিত। যদি ইউসুফের এই নৌকা প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেন তাহলে ইউসুফের সাথে আমরাও গর্বিত হবো।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল পাশা বলেন-‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ইউসুফ প্রধানমন্ত্রীকে একটা গিফট দিতে চায়। সে নিজ উদ্যোগে এরকম একটা সুন্দর জলযান নৌকা তৈরি করতে পারবে, তাতে আমরা কল্পনাও করিনি। সত্যিই এমন প্রতিভায় খুশি হয়েছি। বহু ধারদেনা ও ঋণ করে নিয়ে স্বপ্নের নৌকা তৈরি করেছে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী যদি তা গ্রহণ করেন তাহলে এই গরীব লোকের স্বপ্ন পূরণ হবে।’
জলডাঙ্গা মুজিব পরিবহন নামের এই নৌকা বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা ইউসুফ এর বাবা আবুল কালাম ছেলের এমন প্রতিভায় খুশি হয়ে বলেন-‘আমার ছেলে খেয়ে না খেয়ে ধারদেনা ঋণ নিয়ে এমন নৌকা তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী যদি এই উপহার গ্রহণ করেন তাহলে আমরা ধন্য হব।’
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মোমিন বলেন-‘আমি লোক মারফৎ খবর পেয়েছি এবং ডিসি স্যারকে তা অবগত করেছি। মঙ্গলবার আমি ও ডিসি স্যার দেখতে যাব এবং নৌকাটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পৌঁছাতে চেষ্টা করব।’