রাজশাহীর মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজর জন শিক্ষকই ভুয়া এবং জাল নিবন্ধন সনদে স্বয়ং অধ্যক্ষ। এককথায় শিক্ষাদান ও কলেজের নিয়ম কানুন হ য র ল ব এর মত অবস্থা।
এছাড়া কলেজটির কোটি টাকার সম্পদ আত্নসাত ও গোপনকৃত নথিপত্রসহ সাবেক অধ্যক্ষর দূর্নিতি ও জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি নতুন সভাপতি ইউএনও কে তদন্ত করার আহব্বান জানিয়েছেন শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দরা। গত বুধবার কলেজের নতুন সভাপতি ইউএনও সাথে কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের পরিচিতি সভায় এ আহব্বান জানান শিক্ষকরা।
জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ তরফদারের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারি নবায়নের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট দফতর সমূহে পাঠানো চিঠিতে গভর্ণিং বডির সভাপতির জাল স্বাক্ষর করার অভিযোগ উঠেছে। ওই তালিকায় দেওয়া হয়েছে ভূয়া শিক্ষকের নাম। আর সেই কলেজের গভর্নিং বডির নতুন সভাপতি ইউএনও সেই নিয়গ কৃত ভূয়া শিক্ষকদের বেতন বিলে সাক্ষর করলেন। এমন কি জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিয়গ কৃত শিক্ষক রয়েছেন ওই কলেজে। এসব ভূয়া শিক্ষক ও জাল সনদ দিয়ে নিয়গ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বেতন ভাতার সুবিধা নিচ্ছেন ওই সব জালিয়াতি কৃত শিক্ষকরা। কলেজ গভনিং বডির সভাপতি বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে ওই সব ভুয়া শিক্ষক ও জাল নিবন্ধন সনদ যাচায় করে ও মন্ত্রানলয়ের অডিটের কাগজ দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আহব্বান কলেজ শিক্ষক কর্মচারীদের।
এছাড়াও উপ-বৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় এবং প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি গোপনে এককালিন বিক্রি ও লিজ দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
রাজশাহী আঞ্চলিক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে এসব অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। তিনি ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০২০ সালের ১৮ জুন পর্যন্ত কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ড. মনিরুজ্জামন মোহনগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর চিঠি দেন। চিঠিতে কলেজের স্নাতক (পাস) শিক্ষা কার্যক্রমে ২০২০-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বিএ, বিএসএস এবং বিবিএস কোর্সের অর্ন্তভূক্ত ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামিক শিক্ষা, ভূগোল, পরিসংখ্যান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা এবং মার্কেটিং বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রতিটি বিষয়ে তিনজন করে শিক্ষক উন্নীত করে কাগজপত্র পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, সেই চিঠির জবাব দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক বরাবর চিঠি দেন অধ্যক্ষ। গত ২০ ফেব্রুয়ারী পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে বিধি মোতাবেক সকল বিষয়ের ৩জন করে শিক্ষক কর্মরত আছেন। তবে আগে ভূলক্রমে শুধুমাত্র এমপিওভূক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের নবায়নের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এই চিঠির সঙ্গে ৮৪ জন শিক্ষক ও কর্মচারিদের নতুন তালিকা নবায়নের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে ১২ জন প্রভাষককে নন এমপিওভূক্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন ভূয়া শিক্ষক। বিভিন্ন দফতরে অধ্যক্ষের পাঠানো এই চিঠি এবং নবায়নের জন্য পাঠানো শিক্ষক-কর্মচারিদের তালিকায় সভাপতির জাল স্বাক্ষর করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিধি অনুযায়ী মোহনগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে ৮৮ জন উপ-বৃত্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু জালিয়াতি করে ১২৭ জনকে সেটি দেয়ার জন্য নাম পাঠানো হয়। এছাড়াও উপ-বৃত্তির টাকা দেয়ার জন্য কলেজের প্রায় আড়াশ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। ফলে এলাকার জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গভর্ণিং বডির সভাপতি এবং সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে একটি হিসাব খোলার নিয়ম থাকলেও অধ্যক্ষ কলেজের নামে দুরবর্তী ব্যাংকে ২টি এবং নিকটবর্তী ব্যাংকে ১টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করে আসছেন। ৩টি ব্যাংক হিসাব তিনি নিজে এবং অন্য ১জন শিক্ষকের স্বাক্ষরে পরিচালনা করে থাকেন।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের তহবিল, সম্পত্তির দলিলপত্র, শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ সংক্রান্ত রেজুলেশন খাতা, গভর্ণিং বডির সভার কার্যবিবরণী বহি ও নথিপত্র গোপন করে রেখেছে। গভর্ণিং বর্ডির সভায় একাধিকবার তার কাছে রেকর্ডপত্র প্রদর্শনের চাহিদা দেওয়া হলেও সম্পত্তির দলিলপত্র ও রেকর্ডপত্র উপস্থাপন করেনি। আর কলেজের জমিতে মার্কেট নির্মাণের নামে পজিশন ও সম্পত্তি এককালীন বিক্রয় ও গোপনে লিজ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন।
বাগমরার গনিপুর ইউনিয়ন আ’ লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘উপ-বৃত্তির জন্য তার ভাতিজির কাছ থেকে ৩০০ টাকা নেয়া হয়েছে। টাকা দিতে না চাইলে অধ্যক্ষ নাম পাঠাবে না বলে জানিয়ে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের ১জন শিক্ষক প্রতিবেদককে বলেন, অধ্যক্ষ কলেজে অনিয়মের আখড়ায় পরিনত করেছে। অনিয়ম নিয়ে কেউ কিছু বলতে গেলে চাকরীচ্যুতের হুমকি দেয়। সে কারণে কেউ প্রতিবাদ করে না। এছাড়াও গভর্ণিং বডির নির্দেশনার তোয়াক্কা করেন না অধ্যক্ষ। এখন কলেজের নতুন সভাপতি বাগমারার ইউএনও কে ভুয়া শিক্ষকের নিয়গ যাচায় না করেই তাদের বেতন বিলে সাক্ষর না করার আহব্বান জানান শিক্ষকের কোরাম পুরণ করতে অধ্যক্ষ তালিকায় ভূয়া শিক্ষকের নাম দিয়েছে। গভর্ণিং বর্ডির একাধিক সভায় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব, সম্পদেরর হিসাব নেয়ার উচিৎ।
সভাপতির জাল ও ভূয়া শিক্ষকের নাম তালিকায় অন্তভূক্ত করার বিষয়ে শোকজের জবাবে অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বলেছেন, সভাপতির জাল স্বাক্ষর ও ভূয়া শিক্ষকের নাম দেয়ার সঙ্গে আমার কোন সংপৃক্ততা নেই। একজন শিক্ষক কলেজের নবায়নের সার্থে সভাপতির জাল স্বাক্ষর ও কয়েকজন শিক্ষকের নাম অন্তভূক্ত করেছেন।