গবেষণায় ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ একুশে পদক পাচ্ছেন চাঁদপুরে কৃতিসন্তান অধ্যাপক ড. সমির কুমার সাহা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানজনক এই পুরস্কার প্রপ্তদের মধ্যে রয়েছেন তিনি।
ড. সমির কুমার সাহা একজন অণুজীববিজ্ঞানী এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (অনুষ্ঠান) অসীম কুমার দে স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
২০২১ সালের একুশে পদক পাচ্ছেন যারা তারা হলেন, ভাষা আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক পাচ্ছেন মোতাহার হোসেন তালুকদার (মরণোত্তর), শামছুল হক (মরণোত্তর), অ্যাডভোকেট আফসার উদ্দীন আহমেদ (মরণোত্তর), শিল্পকলায় বেগম পাপিয়া সরোয়ার (সংগীত), রাইসুল ইসলাম আসাদ (অভিনয়), সালমা বেগম সুজাতা (অভিনয়), আহমেদ ইকবাল হায়দার (নাটক), সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী (চলচ্চিত্র), ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যয় (আবৃত্তি), পাভেল রমান (আলোকচিত্র)।
মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে গোলাম হাসনায়েন, ফজলুর রহমান খান ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর)। এছাড়া সাংবাদিকতায় অজয় দাশগুপ্ত, গবেষণায় অধ্যাপক ড. সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে ড. মির্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান, ভাষা ও সাহিত্যে কবি কাজী রোজী, বুলবুল চৌধুরী, গোলাম মুরশিদ পদক পাচ্ছেন।
সম্প্রতিক সময়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের করোনার জিন রহস্য আবিষ্কার করে গোটা বিশ্বকে চমকে দেয় চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এই জিন রহস্য আবিষ্কারের গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান প্রখ্যাত অণুজীব বিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা এবং তার মেয়ে ড. সেজুঁতি সাহা। এর ফলে বাংলাদেশে ভাইরাসটির গতি প্রকৃতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যাবে বলে জানান গবেষকরা। এই জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাসটির রূপান্তরও বোঝা যাবে। যা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করবে। কাজে লাগবে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারেও।
সমীর কুমার সাহা ১৯৫৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সমীর কুমার সাহা চঁাদপুর শহরের কদমতলাস্থ সাহা বাড়িতে বেড়ে ওঠেন। পিতা বরেণ্য ব্যবসায়ী চন্দ্রকান্ত সাহা, মাতা দুলালী প্রভা সাহা। তাঁর অন্য ভাই-বোনরা হলেন : কবিতা সাহা, প্রবীর সাহা ও তৃপ্তি সাহা। সমীর কুমার সাহা অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহার পিতা। তার স্ত্রী ড. সেতারুন্নাহার গণস্বাস্থ্যের গবেষক। তার ছোট ছেলেও পেশায় অণুজীববিজ্ঞানী।
তিনি শিশুদের জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজির ডায়াগনস্টিক বিভাগের অধ্যাপক, সিনিয়র পরামর্শদাতা এবং বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দ্য চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) নির্বাহী পরিচালক।
ড. সমির কুমার সাহা নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এবং এন্টারিক জ্বর বিশেষজ্ঞ বিশেষত পেডিয়াট্রিক সংক্রামক রোগগুলির জন্য তার গবেষণার জন্য পরিচিত। তিনি এই রোগগুলির প্রকৃত বোঝা, তাদের কার্যকারক জীব, ওষুধ প্রতিরোধের নিদর্শন এবং সেরোটাইপ বিতরণের সন্ধানে মনোনিবেশ করেছেন। ২০১৭ সালে, ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজিতে অসামান্য গবেষণার জন্য আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি (এএসএম) অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তিনি আমেরিকান একাডেমি অফ মাইক্রোবায়োলজিতে ফেলোশিপে নির্বাচিত হয়েছেন। একই বছর সাহা মাইক্রোবায়োলজিতে ইউনেস্কো কার্লোস জে ফিনলে পুরস্কার পেয়েছিলেন
ড. সমির কুমার সাহা চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এবং এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া ১৯৮৯ সালে ভারতের বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।