আকাশ সরকার,রাজশাহী ব্যুরোঃ
উত্তরবঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানী নেসকোর ভৌতিক বিল আদায় বন্ধ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও সেবার মানেন্নয়নের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশের পর এবার বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি পেশ করেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ¦ালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, স্থানীয় মেয়র ও সংসদ সদস্যদের কাছেও পাঠানো হয়। স্মারকলিপি প্রদানের সময় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, ন্যাপ নেতা মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম নারীনেত্রী সেলিনা বেগম, মহিলা পরিষদ নেত্রী আকলিমা লিমা, মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম, কেএম জোবায়েদ হোসেন জিতু, ছাত্রনেতা জাহিদ হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল স্মারকলিপি গ্রহন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী ও সাধারণ সম্পাাদক জামাত খান স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তারা রাজশাহীবাসীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবীতে গণতান্ত্রিক নিয়মে আন্দোলন করে আসছেন। বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। আগামীতে আরো বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষমাত্রা অর্জন করবে। অথচ রাজশাহীতে যেখানে কর্মসংস্থানের কোন ক্ষেত্র নেই, বড় বড় কোন শিল্প কলকারখানা নেই, শুধুমাত্র বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি ভিক্তিক অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল। শুধুমাত্র এই প্রধান দুইটি আয়ের উৎসের উপর নির্ভর করে এই অঞ্চলের মানুষের জীবীকা চলে।
অথচ এখানে নেসকো প্রকৃত মিটার রিডার ছাড়াই গ্রাহকের কাছ হতে ভৌতিক বিল আদায়ের উৎসবে মেতে উঠেছেন। হালকা ঝড়ো বাতাস বা সামান্য বৃষ্টি হলেই দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে যায়। দিনে ও রাত্রে বহুবার লোডসেডিং করা হয়। এসব কারণে বিভিন্ন মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র কারখানাগুলো এবং গুরুত্বপূর্ণ আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শর্টসার্কিট হচ্ছে এবং নৈমত্তিক ব্যবহারিক কম্পিউটার, প্রিন্টার, বাসা বাড়ীতে টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোবাইল, ফ্যান, লাইটসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্মারকলিপিতে মহানগরীতে ভূ-গর্ভস্থ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনেরও দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপিকে আরো উল্লেখ করা হয়, স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার কার্যক্রম নিয়ে ইতিমধ্যেই ঢাকা এবং চট্টগ্রামের গ্রাহকদের সীমাহীন দূর্ভোগ দেখা গিয়েছে। এই বিষয়টি নজরে এসেছে রাজশাহীর মানুষের মাঝেও। রাজশাহীর মানুষের দাবী স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট রিচার্জের জন্য পর্যাপ্ত ভেনডিং মেশিনের ব্যবস্থা না করে গ্রাহকের উপরে যেন চাপিয়ে না দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিরাজমান সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোন প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তা হবে নেসকোর আত্মঘাতী। রাজশাহীতে নেসকো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গ্রাহকদের যে ধরনের বিদ্যুৎ সেবা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং সরকারের সঙ্গে যে চুক্তি সম্পাদন হয়েছিল তা দৃশ্যমান হয়নি। এছাড়াও নেসকোর বিভিন্ন দূর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
স্মারকলিপিতে বিদ্যুৎ সেবার মানোন্নয়ন করে এবং নেসকোর অনিয়ম, দূর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।