সিলেট: স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি সব মহলের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে।
কেউই মেনে নিতে পারেনি এ ঘটনা। তেমনি ঘটনাটি নিয়ে জনতার চাপে ছিল সিভিল কিংবা পোশাকি প্রশাসন।
স্বামীর সামনে ঘটে যাওয়া নববধূর সম্ভ্রমহানির ঘটনায় জনতার ক্ষোভ প্রশাসনকেও নাড়িয়ে দিয়েছিল। তাইতো ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখায় অতি অল্প সময়ে গ্রেফতার হয় গণধর্ষণে জড়িত সব ভয়ঙ্কর অপরাধী।
অপরাধীরা নিজেদের আড়াল করতে ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল। চুল-দাড়ি, গোঁফ কেটে মাথা মুড়িয়ে অনেকে ভারত পালানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু নারীর সম্ভ্রমহানির ভয়ানক আর্তনাদে সেদিন সৃষ্টি জগৎও সহ্য করতে পারেনি!
এমন অপরাধ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলকেও নাড়িয়ে গেছে। আর প্রশাসনও নিজেদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে সব আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
সচেতন মহল মনে করে, সর্বোচ্চ মহল কিংবা জনতার চাপ ছাড়া কোনো কিছু সম্ভব হতো না। যে থানার অধীনে ঘটনা, সেই শাহপরান (র.) থানা পুলিশ একজন আসামিকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। তারপরও এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতারে প্রশাসনকে ধন্যবাদ দেওয়া যায়।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সনাক) সিলেটের সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, বিগত দিনে টিলাগড় ও এমসি কলেজে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। জঙ্গি নেতা শায়েখ আব্দুর রহমানকেও এখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেক ঘটনায় প্রশাসনকে নীরব থাকতে দেখেছি। অবশ্য এ ঘটনাটি সর্বোচ্চ মহলকে থেকে শুরু করে জনগণের চাপ ছিল। যে কারণে প্রশাসনও স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা সবসময় এভাবেই হওয়া চাই। তাছাড়া আইনজীবীরাও আসামির পক্ষে আদালতে দাঁড়াননি। মামলার চার্জশিট দেওয়ার পরও তারা এভাবে ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন, আশাবাদী।
সিলেট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মুছা মো. শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সদর দফতরের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেছি। আসামিদের কয়েকজনকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কাজের মূল্যায়ন কতটুকু তা সদর দফতর বিবেচনা করবে।
গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঘটনাটি ঘটলেও মাত্র পাঁচদিনের মধ্যে মামলার এহাজার নামীয় ছয় আসামিসহ আটজনকেই গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মামলার দ্বিতীয় আসামি তারেকুল ইসলাম তারেককে (২৮) র্যাব-৯ এর একটি দল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে।
গত সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১১টার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মামলার ছয় নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমান মাছুমকে কানাইঘাট থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযানে চালিয়ে গ্রেফতার করে।
গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১টার দিকে ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলার কচুয়াবহর নয়াটিলা এলাকা থেকে মামলার সন্দিগ্ধ আসামি রাজন ও তার সহযোগী আইনুলকে গ্রেফতার করে র্যাব-৯ সদস্যরা।
র্যাবের পৃথক অভিযানে মামলার তিন নম্বর আসামি মাহবুবুর রহমান রনিকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। এদিন নবীগঞ্জ উপজেলা থেকে রবিউলকে গ্রেফতার করে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ।
এছাড়া রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে ছদ্মবেশে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে গ্রেফতার করে ছাতক থানা পুলিশ। ওইদিন পৃথক অভিযানে নগর গোয়েন্দা পুলিশ অর্জুন লস্করকে মাধবপুর থেকে গ্রেফতার করে।
এদিকে গণধর্ষণের ঘটনায় সোমবার ছয় আসামি সাইফুর, অর্জুন, রবিউল, মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন ও তার সহযোগী আইনুলকে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটক রেখে নারীকে ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী গণধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে দিনরাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পত্তিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার নারীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেটকারে করে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। বিকেলে এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ছয়জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। তারা টিলাগড় কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার গ্রুপের অনুসারী।
এ ঘটনায় শনিবার ভোর রাতে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুই/তিনজনকে অভিযুক্ত করে নগরের শাহপরান থানায় এ মামলা দায়ের করেন ধর্ষিতার স্বামী।
এছাড়া ঘটনার পর অভিযানে নেমে সাইফুরের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন শাহপরান (র.) থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিল্টন সরকার। ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর রহমানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তিনি।