আকাশ সরকার রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহী মহানগরীতে আদর (২৫) নামের এক যুবককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভেড়িপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১ টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্স জানাই সোমবার দিবাগত রাত ১২ টা ৫ মিনিটে স্থানীয় লোকজন ভেরি পাড়ায় আদর কে গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠান। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে একটার দিকে তার মৃত্যু করেন। ঐ যুবককে কোমরের নীচের দিকে বেশি আঘাত করা হয়। তার পা রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায় বলে মেডিকেল সূত্র থেকে জানা যায়। আজ মঙ্গলবার তিনটার দিকে ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিয়ে ভেড়িপাড়া মোড়ে জমায়েত হয়ে মানববন্ধন করেন আদরের পরিবার ও এলাকবাসী।
এ নিয়ে রাজপাড়া থানায় আদরের বড় ভাই দুলালকে তুলে এনে মনগড়া একটি মামলা করা হয়েছে বলে দুলাল, এলাকাবাসী ও রাসিক ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সির কামরুজ্জামান কামরুসহ অনেকেই অভিযোগ করেন। তারা বলেন, রাজপাড়া থানা পুলিশ মূল আসামীদের আড়াল করতেই এই কাণ্ড করেছে। পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীর দাবী আদরকে তুহিন, সাব্বির, রুমি, রিফাত ও শাহিনসহ আরো অনেকেই খুন করে। অথচ এর মধ্যে তুহিন, সাব্বির, সহ এই খুনের সাথে জড়িত নয় রোমিও, টিটু, রফিকুল ও বাপ্পারাজকে আসামী করা হয়েছে। সেইসাথে বাপ্পা ও মাজেদ নামে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা বলছেন এই দুইজন রাজ স্বাক্ষী। তারা এই খুন করতে দেখেছে বলে দাবী করেন এলাকাবাসী।
রাস্তা অবরোধের সময় রাসিক ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু উপস্থিত হন। তিনি বলেন, নিহতের লাশ মেডিকেলে থাকতেই রাজপাড়া থানা পুলিশ রাতারাতি নিহতের ভাই দুলালকে তুলে নিয়ে গিয়ে মনগড়া মামলা করেন। মূল আসামীদের আড়াল করতেই পুলিশ এই কান্ড করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এই মামলা বাতিল ও মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১ ও ২ নং আসামী বাদে অন্যান্যদের নাম বাদ দিয়ে প্রকৃত আসামী ১ ও ২ নং আসামী সহ রুমি, রিফাত ও শাহিনের নাম অন্তর্ভূক্ত করার দাবী জানান। সেইসাথে এলাকাবাসীর সাথে একমত পোষন করে দ্রুত আসামীদের আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তিনি।
এই নিয়ে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ শাহাদত হোসেন খান বলেন, তিনি অসুস্থ থাকায় রাতে থানায় ছিলেন না। সকালে তিনি মামলায় স্বাক্ষর করেছেন। বাদি যে ভাবে বলেছেন সেভাবেই মামলা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে রাজপাড়া জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় লোকজন, আত্মীয়স্বজন ও ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে কথা বলেন এবং অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করেন।
সেইসাথে তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের রাতে থানায় এসে মুল আসামীদের নাম দিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন। এছাড়া যাদের আটক করা হয়েছে তাদের নাম এজাহারে না থাকলে এবং বাদি না জবাব দিলে কোর্ট তাদের জামিন দিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি। সেইসাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওয়াতায় আনা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তঁার আশ্বাসে জনগণ অবরোধ তুলে নেন।
এদিকে তিনজনেরর মধ্যে আদর ছিলো ছোট। ছোট ছেলেকে হারিয়ে মা পাগলের ন্যায় হয়ে পড়েছে। তিনি বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তিনি এই অবরোধের সময় রাস্তায় ছেলের পাশে পাগলের মত কান্নাকাটি করতে থাকেন। সেইসাথে মূল হোতাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার দাবী করেন।