দৈনিক বাংলার অধিকার ডেস্ক:
রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্ভাব্য বিচারে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বসাতে চায় আইসিসির নিবন্ধক দফতর। বিচার প্রক্রিয়ার এক থেকে পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা বাংলাদেশে করার বিষয়ে পাঁচটি প্রেক্ষাপট ধরে নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ আইসিসির কাছে তুলে ধরেছে তারা।
গত ২১ সেপ্টেম্বর আইসিসির নিবন্ধক পিটার লিউইসের পক্ষে জুডিশিয়াল সার্ভিস বিভাগের পরিচালক মার্ক ডুবিসন দ্য হেগে আইসিসির প্রাক-বিচারক আদালত-৩-এ তাদের পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করা।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের হত্যা-নিপীড়নের অভিযোগে যে শুনানি হওয়ার কথা, ওই আদালত যেন অন্য কোনো দেশে বসিয়ে শুনানি করা হয় সেরকম একটি আবেদন পেশ করা হয় গত মাসে। আবেদনটি করেন রোহিঙ্গাদের পক্ষে কাজ করছে এমন তিনটি ‘ভিকটিম সাপোর্ট গ্রুপে’র আইনজীবীরা। তারা এমন একটি দেশে এই শুনানির অনুরোধ জানিয়েছেন, যেটি নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি কোনো দেশে হবে। আবেদনে দেশের কথা উল্লেখ না থাকলেও, আইসিসি এই আবেদনের অগ্রগতির যে বিবরণী প্রকাশ করে তাতে এই দেশটি ‘সম্ভবত বাংলাদেশ’ বলে উল্লেখ করা হয়।
রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত চালাচ্ছে আইসিসির কৌঁসুলির দফতর। এখনও বিচার শুরু বা শুরুর সিদ্ধান্ত না হলেও বিচারের সম্ভাবনাকে ঘিরে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রস্তুতি চলছে। গত মাসে রোহিঙ্গাদের পক্ষের দুটি আইনজীবীদল রোহিঙ্গা জেনোসাইডের সম্ভাব্য বিচার হেগের পরিবর্তে কক্সবাজারে বা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি কোনো স্থানে করার আবেদন করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসির সব কার্যক্রম সাধারণত চলে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে। কিন্তু এই প্রথম এরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হলো, যেখানে ভিক্টিম বা নির্যাতিতদের শুনানির জন্য আদালতকেই অন্য কোনো দেশে বসানোর আবেদন জানানো হয়েছে। মিয়ানমারকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য যে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন, সেখানে এই দুটি ঘটনাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবীরা।
এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে আইসিসির তিন নম্বর ‘প্রি ট্রায়াল চেম্বার’ আদালতের রেজিস্ট্রি বিভাগকে আদেশ দিয়েছে, হেগ থেকে অন্য কোনো দেশ, যেমন বাংলাদেশে আদালতের কার্যক্রম সরিয়ে নেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে। ২১ সেপ্টেম্বরের আগে এই সম্ভাব্যতা যাচাই করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়।
আইসিসির নিবন্ধকের দফতর গত ২১ সেপ্টেম্বর আদালতকে পাঁচটি প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনে বাংলাদেশে ‘ফিজিবিলিটি মিশন’ (সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সফর) করার কথা জানিয়েছে।
আদালতে উত্থাপিত পর্যবেক্ষণে নিবন্ধকের দফতর বলেছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আদালতের কাজকে সহায়তা করতে নিবন্ধকের দফতর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা চূড়ান্তে কাজ করছে। এ ধরনের ব্যবস্থা চূড়ান্ত করতে কয়েক মাস লাগতে পারে। বাংলাদেশ এখনো আইসিসি সদস্যদের সুবিধা ও দায়মুক্তি দেয়ার চুক্তি সই করেনি। বাংলাদেশে আসবেন এমন আইসিসির কর্মীদের সুবিধা ও দায়মুক্তি দিতে নিবন্ধকের দফতর বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে।