ঝালকাঠি প্রতিনিধি,
ঢাকা থেকে চার দিন বয়সী মৃত কন্যা শিশুর লাশ নিয়ে সড়ক পথে এ্যাম্বুলেন্স যোগে বাড়ি ফেরার সময় বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ঝালকাঠির একই পরিবারের ৪জনের জানাযা সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলাধীন নবগ্রাম ইউনিয়নের বাউকাঠি গ্রামের বাড়ির নিকটস্থ দক্ষিন কালিআন্দার নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিখানা ময়দান প্রাঙ্গনে সদর উপজেলাধীন নবগ্রাম ইউনিয়নস্থ বাউকাঠি বিন্দুবাসিনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বাউকাঠি নিবাসী প্রায়ত সৈজদ্দিন রাঢ়ীর ছেলে সিরাজ ডাঃ এর বড় ছেলে আরিফ হোসেন(৩৫), স্ত্রী কহিনুর বেগম(৬৫), ছোট ছেলে তারেক হোসেন (২৭) ও চারদিন বয়সি হাসপাতালে মৃত কন্যা শিশু সহ ৪ জনের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদেরকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
অপরদিকে একই সময় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত আরিফের শ্যালক একই উপজেলাধীন পার্শবর্তী নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের নৈয়ারী গ্রামের মান্নান খাঁ’র ছেলে নজরুল ইসলাম(২৮)এর জানাযার নামাজ তার নিজ বাড়ীতে একই দিন জোহর বাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয় নিহত নজরুলের বাড়ি গেলে তার ভাই বাবুল জানান, আমার বোনের সংসারে সাত বছর পর একটি কন্যা সন্তান আসে চারদিন বয়সি সেই কন্যা সন্তানের হাসপাতালে মৃত্যু হলে আমার বোনকে হাসপাতালে রেখে আমার ভাই নজরুল সহ দূর্ঘটনায় নিহত সবাই ঝালকাঠিতে রওয়ানা হয়েছিলো। পথিমধ্যে সড়ক দূর্ঘটনায় ঘটনা স্থলেই তারা সবাই মারা যায়। আমার বোনের একমাত্র সন্তান হারানো শোক কাটতে না কাটতেই তার স্বামী, শাশুরী, দেবর, ননদ ও আপন এক ভাইকে হারিয়ে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে সবাইকে শেষবারের মত একনজর দেখার জন্য ছুটে বাড়িতে আসে। বাড়িতে এসে ভাইয়ের একমাত্র ৮ বচর বয়সী মেয়ে ও দেবরের ২২ দিন বয়সী সন্তান দেখে সে প্রায়ই মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে।
আরিফের বোন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ক্যাপটেন থেকে সদ্য পদন্নতি প্রাপ্ত মেজর শিউলী বেগম(৩০) একই অ্যাম্বুলেন্সে থাকায় তিনিও নিহত হন। এ বিষয় নিহত মেজর শিউলির স্বামী মো: কাইউম হোসেন জানান, গত মার্চ মাসে শিউলি ক্যাপটেন থেকে মেজর পদে পদায়ন হয়। যেহেতু সড়ক দূর্ঘটনায় শিউলির মৃত্যু হয় সে ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কতৃক অফিসিয়াল কাজ সম্পন্ন করে আজ বিকেলে আসর বাদ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। কাইউম-শিউলির পরিবারে একটি ২ বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে।
এ বিষয় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজি আক্তার উপজেলার বাউকাঠি গ্রামে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত আরিফের বাড়িতে গিয়ে আরিফের ভাই নিহত তারেকের স্ত্রী সাথে দেখা করেন এবং খবর নেন। একই সাথে নিহতদের নিকটতম আত্মীয়দের সাথেও কথা বলেন। এছারাও মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যুতে ঝালকাঠি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমানের উদ্যোগে আজ শোক প্রকাশ এবং দোয়া মোনাজাত করা হয়েছে। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজী আকতার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মঈন তালুকদার, ইসরাত জাহান সোনালী সহ ১০ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃ্দ সহ সদর উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃ্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয় ৩নং নবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুল হক আকন্দ শোক প্রকাশ করে জানান, এটা একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। আজ একটি সড়ক দূর্ঘটনায় ৬টি তাজা প্রান চলে গেল, যাদের মধ্যে আমার ইউনিয়নেই মা, মেয়ে ও দুই ছেলে সহ ৪জন। এছাড়াও নিহত আরিফের শ্যালক পার্শবর্তী নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের নজরুল সহ ৫জনের করুন মৃত্যু হলো। আমি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা সহ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র ঝালকাঠি ২ আসনের মানীয় সংসদ সদস্য জননেতা আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এমপি মহোদয় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। একই সাথে নিহতদের রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আগামী ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বাদ জুমা বাউকাঠি এলাকার ৫টি মসজিদে মিলাদ ও দোয়া পড়ানোর জন্য ১২মত লোকের তবারকের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।
প্রসঙ্গত গত বুধবার আরিফ ও তার পরিবারের সদস্যরা মৃত কন্যা শিশুর লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঝালকাঠি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রাম সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বাস-অ্যাম্বুলেন্স ও কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে অ্যাম্বুলেন্সটি দুমড়ে মুচরে গেলে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে থাকা আরিফ, আরিফের মা, ছোট ভাই তারেক, ছোট বোন শিউলি, শ্যালক নজরুল ও গাড়ীর চালক সহ ৬জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এদের মধ্যে একই পরিবারের ৪জন রয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত আরিফ একই উপজেলাধীন পার্শবর্তী নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের নৈয়ারী গ্রামে বিয়ে করেন। বিয়ের পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের সংসারে কোন সন্তান আসেনি। দীর্ঘ সাত বছর পর তাদের সংসারে একটি কন্যা শিশু জন্ম নেয়। জন্মের চার দিন পর শিশুটি অসুস্থ অবস্থায় শিশুটি হাসপাতালে মারা যায়। শিশুটির মৃত্যুর সংবাদে আরিফের মা, ছোট ভাই তারেক, বোন শিউলি ও আরিফের শ্যালোক নজরুল ও আরিফ মৃত শিশুর লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঝালকাঠিতে আসার সময় তারা সবাই সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়।আরিফের ছোট ভাই তারেকের ২২দিন বয়সী সন্তানটিকেও একবার দেখে যেতে পারলোনা।