করোনায় এই দুর্যোগ কালিন সময়ে নিউইয়র্কের আনাচে কানচে নানা ভাবে প্রবাসীদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। নানান মাধ্যমে চ্যারিটি করছেন। ফুড ড্রাইভ সহ কমিউনিটির সব কার্যক্রমে বদরুন খান সব সময সক্রিয়। সামনে নির্বাচন, তাই নির্বাচন কে ঘিরেও তার ব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। ভোটারদের নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বদরুন নাহার খান যুক্তরাষ্ট্রের আগামী সাধারণ নির্বাচনে নিউইয়র্ক কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক-১৪ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে নির্বাচন করতে চান। সেই লক্ষ্যে তিনি গত কয়েক মাস ধরে চষে বেড়াচ্ছেন তার নির্বাচনী এলাকা। ডিস্ট্রিক্ট-১৪ থেকে ডেমোক্রেটের কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোয়ন পেতে তিনি দলীয় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তুলে ধরছেন তার নির্বাচনী অঙ্গীকার।
বলছেন, এই আসন থেকে তাকে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করলে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের বাড়ি, চাকুরি, বেসিক ইনকামসহ ছয়টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবেন। এজন্য দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনীত করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
ডিস্ট্রিক্ট-১৪ থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে মনোনয়ন পেতে মোট চার জন প্রার্থী লড়ছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বদরুন খান ছাড়া অন্য তিন প্রার্থী হলেন এই আসনের বর্তমান কংগ্রেস ওমেন আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ, মিশেল ক্রোসিও কাভেরা এবং স্যাম স্ল্যাওন।
আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ নির্বাচনে দলীয় ভোটাররা এই চার জনের মধ্যে থেকে একজনকে নির্বাচিত করবেন কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে। যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি আগামী ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে নিউইয়র্ক কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-১৪ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই আসনটিতে বরাবরই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়ে থাকেন।
বদরুন খান ২৩ জুনের নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে তাহলে তিনি হবেন প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোন নারী। যিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেস ওমেন নির্বাচিত হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পাবেন। তবে তার আগে তাকে দলের বৈতরণি পার হতে হবে। এ জন্য তিনি দলীয় ভোটারদের সবার কাছে ভোট ও সমর্থন প্রার্থনা করছেন। বদরুন খান জানান, এই আসনে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটারদের একটা বড় অংশ হচ্ছে মুসলিম এবং এশীয় অঞ্চলের বিশেষ করে পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক, যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এই ভোটাররা যদি ২৩ জুন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন তাহলে বদরুন খান নিশ্চিত জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদী।একই সঙ্গে তিনি জানান, করোনাভাইরাসের কারণে যারা ভোট কেন্দ্রে যেতে চান না বা যেতে পারবেন না, তারা চাইলে ভোট কেন্দ্রে কল করে ব্যালট পেপার বাসায় এনে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সেটি ডাকযোগে (মেইল) নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে পারবেন।
বদরুন খান নিউইয়র্কের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-১৪ তে বসবাসরত ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক বাংলাদেশি এবং মুসলিম নাগরিকদের বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন,তারা যেন ২৩ জুন ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাকে একটি ভোট দেন। তাহলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। প্রথমবারের মতো কোন মুসলিম এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোন নারী ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে আগামী ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার এবং বিজয় লাভের সুযোগ পাবেন।
বদরুন খান জানান, তিনি ডিস্ট্রিক্ট-১৪ জনগণের ছয়টি সমস্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবেন। এগুলো হচ্ছে- সহজে অর্জনযোগ্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা; আরও বেশি করে কর্মসংস্থান এবং সবার জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা; ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য মাসে এক হাজার ডলারের সার্বজনীন মৌলিক আয়ের ব্যবস্থা করা, গৃহহীনদের আশ্রয়দানের জন্য কমিউনিটিতে জায়গার অনুমতি দেয়া; আগামী প্রজন্মের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের সংগ্রাম করা এবং অভিবাসন ব্যবস্থার সংস্কার ও ডিএসিএ সুরক্ষার আন্দোলন করে যাবেন।
বদরুন নাহারের জন্ম নিউইয়র্কে। তার বাবা কলন্দর মিয়া আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আাগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন। এরও আগে ১৯৪৭ সালে তার চাচা সিকান্দর মিয়া যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তারা মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগৎপুর গ্রামের বাসিন্দা। দুই বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বদরুন দ্বিতীয়। তার স্বামী শাহান খান যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঠানঠুলা গ্রামে।