তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১১ বছরে দেশের গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মাধ্যম তিনগুণ হওয়ার পাশাপাশি কয়েক হাজার অনলাইন সংবাদ পোর্টাল হয়েছে, যেগুলোর নিবন্ধন বিষয়ে দ্রুত কাজ চলছে।
দ্রুত, সঠিক ও নির্ভুল সংবাদ প্রচার করায় অনলাইন নিউজ পত্রিকাগুলো (পোর্টাল) দেশে আজ বেশ জনপ্রিয়। অধিকাংশ অনলাইন গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করলেও বেশ কিছু অনলাইন তা করছে না। এতে অনেক সময় সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই অনলাইন গণমাধ্যমগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে নিবন্ধন দিতে যাচ্ছে সরকার।
অনলাইন নিবন্ধনের জন্য প্রায় আট হাজার আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে তিন হাজার ৫৯৭টি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেগুলো সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে ইনভেস্টিগেশন করতে পাঠানো হয়। তারা ইতোমেধ্যে কয়েকশ’ অনলাইনের তদন্তকাজ শেষ করে পাঠিয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় এগুলোর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে নিবন্ধন দেওয়া শুরু করবে।
দেখা গেছে ঘরে বসে কয়েকজন মিলে একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করে দেয়। তবে এখন আর এসব নাম সর্বস্ব অনলাইন পত্রিকা করতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি যারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে না, এসব ভুয়া পোর্টালের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবে সরকার।
নিবন্ধনের পর থেকে এভাবে আর অনলাইন পত্রিকা চালানো যাবে না। অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। সে আলোকেই তাদের চলতে হবে। নিবন্ধন পাওয়ার পর বেশ কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘একটি দৈনিক পত্রিকাকে যেভাবে অনুমোদন নিতে হয়, সেই আদলেই অনলাইন পোর্টাল পত্রিকাকে নিবন্ধন দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সরকারের কয়েকটি সংস্থার তদন্ত শেষে বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালের সার্বিক তথ্য এসেছে। এগুলোর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেওয়া শুরু হবে। অধিকাংশ অনলাইন মনিটরিং করা হচ্ছে। যেসব অনলআইনগুলো বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করছে এবং অফিস, পর্যাপ্ত সংবাদকর্মী আছে তাদের নিবন্ধন প্রথমে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘‘আবেদনের মধ্যে এমন অনেক পোর্টাল আছে, যেসব পোর্টাল যারা চালাচ্ছেন তাদের সাংবাদিকতাসহ অন্য কোনো পেশায় কাজ করার যোগ্যতা নেই। তারা অনলাইন খুলে বসে কার্ড বানিয়ে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে নিজেদের। তাদের মতো কয়েক জনের জন্য বৃহত্তর সাংবাদিক পরিবারের বদনাম হয়।
‘এটি যাতে না হয় সেজন্য অনলাইন নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। নিবন্ধন দেওয়ার পর যেসব গুজব কিংবা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ এগুলোর ডোমেইন বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
তথ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার গণমাধ্যমবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। ১১ বছর আগে পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৭৫০টি, এখন এক হাজার ৩০০ এর বেশি। টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ছিল ১০টি। এখন ৩৪টি সম্প্রচারে আছে এবং ৪৫টির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে ১১ বছর আগে হাতে গোনা কয়েকটি অনলাইন ছিল। এখন কয়েক হাজার অনলাইন পত্রিকা রয়েছে।
‘অনলাইন পত্রিকাকে স্বীকৃতিসহ মনিটরিং করতে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে। কেননা অনলাইন পরিচালনার জন্য নিবন্ধন নিতে হচ্ছে না। তাই যে কেউ একটি ডোমেইন কিনে অনলাইন পত্রিকা খুলছে।”
তিনি বলেন, ‘দেশে নয় কোটির বেশি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। সোশ্যাল মিডিয়ার যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গুজবও ছড়ানো হচ্ছে। এটিকে শৃঙ্খলায় আনার জন্য নিবন্ধন দেওয়া হবে।’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সহসাই অনলাইন সংবাদ পোর্টালের নিবন্ধন (রেজিষ্ট্রেশন) হবে। আর যেসমস্ত অনলাইন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে না, হীন উদ্দেশ্যে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায় ও নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।