সুশীল চন্দ্র দাস হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিম এর বিশেষ ভূমিকায় হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের ইকরাম গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়ার বেদখল হওয়া কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। আখড়ার জায়গা উদ্ধার হওয়ায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা দৈনিক বাংলার অধিকার কে জানান, আখড়া পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি গোপাল নমঃশুদ্র ও সাধারণ সম্পাদক ক্ষীরমোহন নমঃশুদ্র দীর্ঘদিন আখড়াটির জায়গা দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন। তারা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আখড়ার বিভিন্ন জমি সাবেক এক চেয়ারম্যানসহ এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে ইজারা দেয়াসহ অর্থ নিয়ে দখল দিয়েছেন। স¤প্রতি এনিয়ে এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে আখড়ার দখলকৃত জায়গা উদ্ধারের জন্য পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন বর্তমান কমিটির সভাপতি রবিন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিজয় সরকার। সম্প্রতি আখড়া পরিদর্শন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিম বিট পুলিশিংয়ের সদস্য, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়ে আখড়া পরিদর্শনে যান গিয়ে আখড়ার জায়গা দখলের সত্যতা পান। এ সময় তিনি উভয় পক্ষ ও স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করে আখড়ার দখলকৃত জায়গায় নির্মিত ঘর সরিয়ে নেয়ার জন্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন। অন্যথায় প্রশাসন সেগুলো উচ্ছেদ করবে বলে তিনি হুশিয়ারি দেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আখড়া কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আখড়ার জায়গা তাদের নির্মিত ঘর সরিয়ে নেন।
শনিবার দুপুরে তারা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ সেলিমের কাছে আখড়ার দখল সমজিয়ে দেন এবং সাবেক চেয়ারম্যান আছকির মিয়া ছামদু তার দখলে থাকা আখড়ার ১৫ কের জমির স্বেচ্ছায় দখল ছেড়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সমজিয়ে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি শংকর পাল, স্বপন বণিক, সাধারণ সম্পাদক শংখ শুভ্র রায়, যমুনা টিভি’র জেলা প্রতিনিধি প্রদীপ দাশ সাগর, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ শামীম, সাবেক চেয়াম্যান আছকির মিয়া ছামদু, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব রায় সুজন, বিপ্লব রায় চৌধুরী, এসআই ধ্রæবেশ চক্রবর্তী, ডা. বিশ্বজিত আচার্য, দিবাকর রায় বাপ্পী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিমুল পাল, রজত রায়, সুজন সরকার প্রমূখ।
এ ব্যাপারে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব রায় সুজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে আখড়ার সাবেক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আখড়া জায়গায় বাড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন। এছাড়া তারা সাবেক চেয়ারম্যান আছকির মিয়া ছামদুসহ এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে টাকা বিনিময়ে আখড়ার জায়গার দখল সমজিয়ে দিয়েছিলেন। এনিয়ে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরবর্তীতে আমাদের পরামর্শে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জায়গা উদ্ধারের সহযোগিতার আসাস দেন। বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মো. সেলিমের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার অতিরিক্ত পুলিশ শেখ মো. সেলিমকে আখড়াটি সরে জমিনে পরপর দু’বার পরিদর্শন করে আখড়ার সাবেক ও বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ স্থানীয় এলাকাবাসীসহ হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের সাথে মতবিনিময় করে আখড়ার বেদখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে দেন। এ জন্য আমরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. সেলিমসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
এছাড়াও তিনি আখড়ার উদ্ধারে লেখনী মাধ্যমে ভূমিকা রাখায় সাংবাদিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও আখড়ার জায়গা উদ্ধারে ভূমিকা রাখায় জেলা পূজা উদযাপন কমিটি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আছকির মিয়া ছামদু জানান, আখড়া কমিটির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ এলাকার স্থানীয় হিন্দু মুরুব্বীয়ান আমার কাছে থেকে জায়গার বদলে জায়গা নিয়ে আখড়ার জায়গা দখল সমজিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে আমি ওই জায়গার দখল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ সেলিমের মাধ্যমে হিন্দু নেতৃবৃন্দের কাছে দখল সমজিয়ে দিয়েছি।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ শামীম জানান, দীর্ঘদিনের বেদখলকৃত শ্রী শ্রী জগনাথ জিউর আখড়া জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। এ জন্য তিনি পুলিশ, সাংবাদিকসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) শেখ মো. সেলিম ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রমে অংশ হিসেবে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিত ভাবে বেদখলকৃত আখড়ার কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করে দিয়েছি। পরবর্তীতে এলাকায় যাতে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা না হয় এজন্য সকলকে সর্তক করে দিয়েছি।