আল-আমিন নেত্রকোণা প্রতিনিধিঃ মাদক হচ্ছে একটি মন-মানসিকতা পরিবর্তনকারী রাসায়নিক দ্রব্য। যা গ্রহন করার ফলে ব্যবহারকারীর মনমানসিকতার পরিবর্তন হয়। মাদক কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে ( Central Nurbus System) নিয়ন্ত্রণ করে। যা ব্যবহারের ফলে ব্যক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকেনা। মাদক কোন সমাধান কিংবা বিনোদনের মাধ্যম নয় বরং আত্ন-হননের পথ মাত্র। কৌতুহল, সঙ্গীদের চাপ, রোমান্স, কিংবা বিলাসিতা হিসেবে বেচে নেওয়া কিছু স্কুল-কলেজ পড়ুয়া যুবক-যুবতী স্বল্প সময়ের নিষিদ্ধ সূখের আশায় মাদকের বেড়াজালে জড়িয়ে হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত । পরিণতিতে মৃত্যুই যেন একমাত্র মুক্তির পথ.! মদ, গাঁজা, ড্যান্ডি, হেরোইন, ফেন্সিডিল,ইয়াবা, আইস, খাট, প্যাথিডিন, Lupigesic-লুপিজেসিক (ব্রুপেনাপাইন ইনজেকশন) সহ সকল মাদকের ছড়াছড়িতে ধ্বংস নামক ডাইনোসরের মূখে নিমজ্জিত দেশের যুব সমাজ। নেত্রকোণায় ২০২০ সাল পর্যন্ত আইনজীবী, টিকাদার, রাজনীতিবীদ, ব্যবসায়ী ও মেধাবী ছাত্র সহ মাদকাসক্তির কারণে মৃত্যুবরন করেছে প্রায় ৪০ জন।
মাদক নির্মূল অভিযানে এযাবৎকাল প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের মাদক উদ্ধার করেছে নেত্রকোণা আইন- শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্প্রতি ডিবি পুলিশ নেত্রকোণা মাদক উদ্ধার পূর্বক ব্যবসায়ী গ্রেফতার করে সর্বস্তরের জনগণের প্রশংসা অর্জন করেছেন। মাদকের সহজ লভ্যতাই মাদক নির্মূলের প্রধান অন্তরায়.! মাদক নির্মূল অভিযানে সারাদেশে মাদকের সরবরাহ কম ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিকল্প মাদকের চাহিদা এখন তুঙে। হেরোইন, ইয়াবা এর বিকপ্ল হিসেবে ওমরফিন (ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ব্যবহৃত) ট্যাবলেট বর্তমানে মাদক সেবীদের কাছে অবৈধভাবে বিক্রি করছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী । ১০ টাকার ওমরফিন কালোবাজারে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে। সম্পপ্রতি ট্যাপেন্টাডল ট্যাপেকশিয়া ট্যাবলেট বিকল্প মাদক হিসেবে মাদকাসক্তদের কাছে বিকল্প মাদকে পরিণত হয়ে উঠেছে। ফেন্সিডিল এর বিকল্প হিসাবে বাজারে বেশ দাপট আছে অফকফ, ডেক্সফোডেন, ফেনারগন,তুসকা, বেনজিডিল এর মত কাশির সিরাপ। কালোবাজারে ২০ টাকার এইসব সিরাপ ৬০-১০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। প্যাথিড্রিন এর বিকল্প হিসেবে Lupigesic ইনজেকশন মাদকসেবীদের খুুুবই প্রিয় একটি মাদক।
Lupigacic মোম্বাই, ইন্ডিয়ার তৈরী উত্তেজক একটি ড্রাগ। Lupigesic (Buprenorphine) ইনজেকশন এর বিকল্প হিসাবে Nalbun (যন্ত্রনা নাশক) Diazepam ও ফেনারেক্স দিয়ে ককটেল আকারে গ্রহণ করছে। যৌএন উত্তেজক (ইয়াবা, ফেন্সিডিল) এর বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত মাদকসেবীদের কাছে সম্প্রতি জিনসিন জাতীয় (ইউনানি)র কিছু অনুমোদনহীন সিরাপ কালো বাজারে বিক্রির কারণে তা মাদকেে পরিণত হয়েছে। মাত্র ৪০-৬০ টাকায় ফার্মেসী এবং মুদির দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে এইসমস্ত অনুমোদনহীন সিরাপ। মাত্রাতিরিক্ত সেবনের ফলে ব্যক্তির মধ্যে তীব্র যৌন উত্তেজনার ফলে কামবাসনা চরিতার্থ করতে পাগলের মত আচরণ করে। যা ধর্ষনের কারণ হয়ে দাড়ায়। ড্যান্ডি (গাম) স্কুল পড়ুয়া কিশোরদের কাছে বহুল প্রিয় আরেকটি নেশাদ্রব্যের অতিপরিচিত ডেন্ডি/ডেন্ড্রাইব জাতীয় গাম। দামে কম সহজলভ্যতার কারণে এর ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি যেমন একটি পরিবার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট তেমনি একজন মাদক ব্যবসায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট – মাদক ব্যবসায় রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার নজির এই সমাজের রাস্তাঘাটে পদদলিত ড্রিংসের ককের মত। মাদক কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে ছোট বড় কিশোর গ্যাং। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদকাসক্তের সন্তান জানায়, বাবা মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে বন্ধু মহলে প্রায়শই হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়। “হিরোইঞ্চি”র ছেলে বলে প্রায়ই তিরস্কৃত হতে হয়। মাদকাসক্ত বাবার সন্তান পরিচয় দিতে খুব লজ্জা লাগে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদকাসক্তের স্ত্রী জানান, প্রতিবেশীদের অবহেলা, কটুকথা আর তিরস্কার যেন নিত্যদিনের সঙ্গি.! প্রতিবেশীদের (বউদের) সাথে আড্ডায় অনেক সময় অমুকের বউ খুব সুন্দর, অমায়িক আচরণ, মিষ্টভাষী, শিক্ষিতা, বিনয়ী বলে যখন প্রশংসা কুঁড়ায় পাশের বাড়ীর বিজেতা ভাবী তখন হিংসায় ঈর্ষায় তেলেবেগুনে জ্বলে তিরস্কার করে বলে বসে দেখছি সর্বে গুণে গুণান্বিতা মহিলি নিজের স্বামীকেই তো নেশা থেকে ফিরাতে পারেনা.! অশ্রুসিক্ত মাদকাসক্তের স্ত্রী আরও বলেন, স্বামীর সকল প্রশংসা ও গুণের দাবীদার তার পরিবার, সন্তানের বেলায় বাবা। এবং মাদকাসক্তি কিংবা বদনাম আর সন্তানের শত দোষের কারণ একমাত্র মা, স্বামীর বদনামের দ্বায় সবটুকুই স্ত্রীর.! পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর সংসার নামক যন্ত্রণার কারাগার থেকে মুক্তি পেতে মাদকাসক্ত সন্তানের মা এবং স্বামীর চাইতে নিঃসন্তান, বিধবা, একা জীবন অনেক শান্তির বলে জানান একাধিক মাদকাসক্তের স্ত্রী। মারাত্মক দণ্ডনীয় কাজ ‘মা’দ’ক’ নির্মূলে- ”চল যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে” -শ্লোগানে জিরো টলারেন্স নিয়ে সরকারের চলমান মাদক বিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের সর্বস্তরের সাধারন মানুষ। মাদক উৎপাদন way কেনাবেচা ও রুট সমুহঃ হেরোইন= C2, H2, N O5 ; অপিয়াম পপি, জেরা আফিম, মরফিন,ডায়া মরফিন, পেথিড্রিন, হেরোইন এবং ইয়াবা তৈরীতে মেথ- অ্যম্ফিটামিন ও ক্যাফেইন এর মিশ্রণ ব্যবহার হয় কখনো কখনো এর সাথে হেরোইন মেশানো হয়ে থাকে।। উৎপাদনকারী এলাকাঃ- গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল= বার্মা চীন থাইল্যান্ড। গোল্ডেন ক্রিসেন্ট = ইরান পাকিস্তান আগানিস্তান। গোল্ডেন ways = আফগানিস্তান নেপাল ভুটান। →চীন← ↓ ট্রানজিট + বাংলাদেশ ↓ হেরোইন →ইয়াবা → ফেনসিডিল →মদ →গাঁজা ↓ → +← ↓ ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা ও জামালপুর জেলাসমুহের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত থাকার সুযোগ নিয়ে বর্ণিত জেলা সমুহের কিছু প্রভাবশালী অসৎ লোকের প্রত্যক্য ও পরোক্ষ সহায়তায় এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি সীমান্ত দিয়ে ভারত হতে ফেন্সিডিল, মদ, বিয়ার, হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক এনে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে গেছে । তাদের অবৈধ মাদক ব্যবসা ও চোরা চাললানের কারনে এলাকায় একদিকে যেমন নতুন নতুন মাদকসেবী তৈরী হচ্ছে, অন্যদিকে অবৈধ মাদকসেবীরা তাদের অর্থের যোগান দিতে ক্রমশই ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম ও খুনসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সঙ্গত কারণে পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে গড়ে উঠা মাদক ব্যবসার দিনের পর দিন অবৈধ বিস্তৃতি ঘঠছে এবং এর ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে।। ময়মনসিংহ জেলাঃ জেলার হালুয়াঘাট থানার সূর্যাপুর, বান্দরকাটা ও আইলাতলী এবং ধোবাউড়া থানার ঘোষগাঁও ও চাড়ুয়াপাড়া রুট। এছাড়া হালুয়াঘাট উপজেলার ধুবড়াকুড়া এবং ধোবাউড়া উপজেলায় কড়ইতলী নামক দুইটি এলসি ষ্টেশন রয়েছে। উক্ত দুটি এলসি ষ্টেশন দিয়েও মাদক কয়লার ট্রাকের সাথে অত্র জেলায় চোরাচালান হয়ে থাকে। সমুদ্র পথে টেকনাফ দিয়ে আসা ইয়াবা রেলপথ এবং সড়কপথে অত্র জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। নেত্রকোণা জেলাঃ জেলার অবৈধ মাদক প্রবেশের রুটসমুহ ও পদ্ধতিঃ চট্রগ্রাম হতে ঢাকা ময়মনসিংহ কিশোরগঞ্জ হয়ে সড়ক পথে বাস ট্রাক প্রাইভেট কার এবং ময়মনসিংহ হতে ট্রেন যোগে ইয়াবা-গাঁজা দূর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন মদ এবং সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা দিয়ে নৌপথে গাঁজা ফেনসিডিল চোরাকারবারি/ব্যবসায়ীরা আনয়ন করে থাকে। জেলার অবৈধ মাদক কেনাবেচার স্থানস্পটসমুহঃ নেত্রকোনা জেলায় মাদক ব্যবসায়ীরা সুনির্দিষ্ট স্থান বা স্পট হতে তাদের মাদক বিক্রি করে না। তারা তাদের বাসা-বাড়ী, দোকান-পাট, ঝোপঝাড় বা পুকুরের পানি ইত্যাদির সুবিধাজনক স্থানে লুকিয়ে রেখে বিক্রয় করে থাকে। মাদকের কড়াল গ্রাস থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে এই সমস্ত বিকল্প মাদক সহ সকল প্রকার মাদক নির্মূল সহ মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবীতে বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী সহ সর্বস্তরের জনগণ।