মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ বিপন্ন মানবতা লিখেছেন ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবু হায়াত নুরুন্নবী৷ বিকেল বেলায় ঘুম ভাঙার পর এক কাপ চা হাতে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, বৃষ্টি স্নাত স্নিগ্ধ একটা বিকাল। আজ দুপুরে ঝিম ঝিম বৃষ্টি হয়েছে তাই সব কিছুতেই একটা ভেজা ভেজা ভাব, মনটাও কেমন ভেজা ভাবে আছন্ন হয়ে আছে, পাশে মুখ থুবড়ে পরে থাকা মোবাইল ফোনটা হাতে নিতে ইচ্ছা হচ্ছে না। জানালা দিয়ে দূরে চোখ পড়তেই দেখি মোড়ের মাথার গিজগিজ করছে মানুষ, কারো হাতে চায়ের কাপ, গল্পের বেশ একটা মিষ্টি আড্ডা জমে উঠেছে। ভালই লাগলো বৃষ্টি ভেজা বিকালে বেশ স্বাভাবিক একটা সুখী সুখী পরিবেশ দেখে!! হঠাৎ একটা ঠান্ডা বাতাস শরীরে লাগতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, থমকে থাকা মেঘ বিদ্রুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নিজেকে বলি, এত সাতপাঁচ চিন্তা না করে এমন সুন্দর বিকালটা অন্তত উপভোগ তো করি।। কিন্তু অনিচ্ছাসত্ত্বেও একটা বিষয় বার বার মনে উঁকি দিচ্ছে। আজকাল অদ্ভুত একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছি, আয়নার সামনে দাঁড়ালেই গহীন একটা জংগলে নিজেকে দেখতে পাচ্ছি, চারিদিকে কিছু বন্য প্রাণি সাথে কিছু মানুষ তাদের সাথে আমি নিজেকেও দেখি। আর দেখি সাদা কাপড়ে মোড়া কিছু মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুরছে সবার আশেপাশে, এটা অনেকদিন ধরেই দেখছি। কিন্তু অবাক হই যখন দেখি মৃতদেহ গুলি সবার মতই পানি, বাতাস,খাদ্য সব গ্রহন করছে! এরা সকল প্রকার জীব জন্তু, কীট পতঙ্গ, ভাইরাসকেও প্রতিরোধ করে স্বাভাবিক চলতে পারছে, এদের পঁচন নেই। বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না, বরং ভয় পেতে দেখি এদের কে! দিনরাত আলো বেরোয় এদের শরীর থেকে, কিন্তু অবাক হই তখন যখন এদের কাছে কাছি যে যায় সেই নাক ঢেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, ভাবি তাহলে কি এদের থেকে দুর্গন্ধ বের হয়? তাহলে যে আলো আমি দেখি সেটা কি আলো নয় শুধুই মরীচিকা? মানুষ, পশু, মৃতদেহ এক সাথে কেন……?? আয়না থেকে সরিয়ে নেই নিজেকে, ভাবতে থাকি আমি যা দেখি সেটাই কি আজকের বতর্মান! আমরা কি অন্ধকার অসামাজিক যুগে ফিরে যাচ্ছি?? ঐ সাদা কাপড়ে মোড়া মৃতদেহ গুলি কি বিবেকহীন মানবতা, যারা আলো ছড়ানোর নামে সমাজে হিংসা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে? যে হিংস্র পশু গুলি মানুষের সাথে দেখি তারা কি এই সমাজের কিছু অমানুষের প্রতিচ্ছবি, যারা দেখতে অবিকল মানুষের মত তারাও এই সমাজের অংশ হয়ে আছে….? আমরা সবাই চোখ বন্ধ করে আছি, দেখাচ্ছি বেশ তো আছি। অথচ আমাদের সামনে হাজারো সমস্যা, কাকে কখন কি সমস্যায় পড়তে হবে কেউ জানিনা, চারিদিকে ভালোবাসার মানুষ গুলির শুকনো মুখ। অন্যদিকে মৃত্যুর মিছিল লম্বা হয়েই চলেছে, কে কখন এই মিছিলে যোগ দিব কেউ জানিনা, তবুও এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিজেদের আধুনিক সভ্য উন্নত জাতি দাবি করা মানুষদের অমানবিক স্বার্থপর ও হিংস্র চরিত্র!!! প্রতিটি মৃত্যুই বেদনাদায়ক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ এর অধ্যাপক ডাঃ মহিউদ্দিন এর করোনায় মৃত্যু পরবর্তি ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা পড়ার পর স্তব্ধ হয়ে গেছি! সন্তান মা কে ফেলে চলে যাচ্ছে! বাবার লাশ নিতে আসেনা প্রিয় সন্তান আর আপন জনেরা! শেষ যাত্রায় পাশে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাতে আসেনা প্রিয় মানুষরা! লাশ দাফনেও চলছে বাধা! মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে চলছে নগ্ননৃত্য! যা দীর্ঘদিনের চলে আসা অসুস্থ রাজনীতির চিত্র, যা দিন শেষে জাতি হিসাবে আমাদেরকেই ছোট করে। এ সব করে মানুষের রোষানল থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু প্রকৃতির রোষানল থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না। এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য কতই না চেষ্টা আমাদের, প্রেম-ভালোবাসা আপন-পর নিয়ে কতই না চিন্তা! পিতা পুত্র, স্বামী স্ত্রী কে কার? সভ্যতাহীন একটা সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে আমাদের ভেতরে। করোনা বুঝিয়ে দিচ্ছে, আসলেই আমরা কেউ কারো নই । সভ্য হতে আমাদের আরো অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে।।