নেত্রকোনা জে’লার কেন্দুয়া উপজেলার শান্তিনগরের সোহরাব মাষ্টারের বাসায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে ছিলিমপুরের বাসিন্দা মুকুল খানের সন্তান পিন্স খান বাবু। গত ২৯ জানুয়ারি বিকালে ঘটনাটি ঘটানো হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষণের শিকার ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং ধর্ষণকারী বাবুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার পরদিন ৩০ জানুয়ারি ভিকটিমের বড় ভাই কেন্দুয়া পাড়াতৈল গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম থানায় গিয়ে ওসি রাশেদুজ্জামান বরাবর বোনকে জোরপূর্বক ধর্ষনের অভিযোগ দায়ের করেন।
থানার ওসি প্রথমে বিষয়টি পজেটিভ হিসাবে নিলেও অজ্ঞাত কারণে পরে ওসি কামরুল ইসলামকেই থানায় একটি কক্ষে প্রায় ১৪ ঘন্টা আটক করে রাখেন। এরপর ওসি তাকে হুমকি দেয় যে, এ বিষয়ে মামলা করলে অন্য মামলায় তোর বোন এবং তোকে আটক দেখিয়ে কোর্টে চালান করে দিব।
ওসি শাষিয়ে বলেন যে, তোর বোন অনেকদিন ধরে পতিতার ব্যবসা করে আসছেন এ বিষয়ে আমরা জানতে পারি। হুমকি শেষে ধর্ষণের শিকার ১৬ বছর বয়সী ঐ ভিকটিম এবং তার বড় ভাইয়ের নিকট থেকে ওসি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।
কামরুল ইসলাম থানা থেকে বের হয়ে বিষয়টি নেত্রকোনার পুলিশ সুপারকে (এসপি) আকবর আলী মুনশিকে জানান। এসপি অবগত হয়ে বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে ওসিকে মামলা নেয়ার নির্দেশ দেন। পরে ওসি ফোন করে কামরুল ইসলামকে জানায় যে, মামলা নেয়া হবে। ওসি তাদেরকে থানায় আসতে বলেন। বোনকে নিয়ে থানায় এলে ওসি তাদেরকে আলাদা রুমে আটকে রাখেন। হুমকি দেন, তোদের কতো বড় সাহস আমার বিরুদ্ধে এসপির কাছে অভিযোগ করেছিস।
দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা থানায় আটকে রাখার পর আবারও পৃথক দুটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বলেন যে, মামলা নেব, তোরা এখন যা। এরপর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ডভুক্ত করেনি ওসি। করোনা পরিস্থিতিতে আদালতে গিয়েও মামলা করতে পারেননি ভুক্তভোগীরা। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ।
ভূক্তভোগী কামরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ওসির ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে ৬ মাস যাবৎ আমরাই পলাতক জীবন-যাপন করছি।
ধর্ষণের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী জানান, ওসি রাশেদুজ্জামান আমাকে অশালীন ভাষায় খারাপ খারাপ কথা বলেছেন। তখন আমি তাকে বলেছি আমি আপনার মেয়ের মত। তারপরও তিনি আমাকে বেশ্যাসহ নানান গালিগালাজ করেন। একজন নারী পুলিশকে দিয়ে আমার চোখ ও হাত পেছনে বেঁধে ৬ ঘন্টা আটকে রাখেন। ধর্ষক বাবু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তির সন্তান হওয়ায় বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে।
এদিকে কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা নিতে এবং ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইজিপি বরাবর গত ১০ জুন একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
কামরুল ইসলাম বলেন, ওসি আমাকে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখানোয় পরে এসপিকে আর এ ব্যাপারে কিছুই জানাইনি।
কেন্দুয়া থানার ওসি রাশেদুজ্জামান বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মসহ বিভিন্ন ঘটনায় ওসি রাশেদুজ্জামানকে নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে তদন্তও করছে জেলা পুলিশ।