ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের জেলা উপজেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে উন্নয়ন, বিশৃঙ্খলা, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, দুর্নীতি – অনিয়মসহ সার্বিক সংবাদ পরিবেশন করেন একজন মফস্বল সাংবাদিক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই মফস্বল সাংবাদিকদের সততা ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন তথা পারিশ্রমিক অর্থাৎ সন্মানীভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলেই উদাসীন। মফস্বলের এই সাংবাদিকরা রাতদিন পেশার সাথে যুক্ত থেকে জনকল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রিন্ট পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত মফস্বলের সাংবাদিকরাও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভেও অংশ । মফস্বল সাংবাদিকগণ লিখনির মাধ্যমে তুলে ধরতে সদাব্যস্ত থাকেন জনসাধারণ কীভাবে তাদের মুখোমুখি হওয়া বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি সরবরাহ করে। মফস্বলের সাংবাদিকতা পেশাটি কখনও ফুলের বিছানা নয়, যারা এই পেশায় থেকে সেইসব প্রভাবশালীদের পেশিশক্তি প্রদর্শন, দুর্নীতি অনিয়ম, অন্যায়ের ঘটনাটি সামনে এনেছেন তখনই তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ । মফস্বলের সাংবাদিকদের পথে যেন কাঁটা বিছানো । মফস্বলের সাংবাদিকের সত্য লেখা এবং সত্যের বিশদভাবে বিশ্লেষণ করার শাস্তি কখনও কখনও এত ভয়াবহ হয় যে তিনি এবং তাঁর পরিবার চিরতরে সমস্যায় পড়ে যান। হামলা মামলা নির্যাতন এমনকি আরো ভয়ংকর অবস্থার শিকার হতে হয় মফস্বল সাংবাদিকদের। এসময় তাদের স্ত্রী এবং সন্তানরাই পাশে দাঁড়ান আর চিন্তা করেন। এঘটনা কে বা কারা প্রতিরোধ করবেন, কীভাবে ভূক্তভোগী সাংবাদিককে নিরাপদে রাখবেন তাদের কল্যাণে পদক্ষেপ নেয়ার মত সংগঠনও চোখে পড়ে না । এতকিছুর পরও মফস্বলের সাংবাদিকরা মারাত্মকভাবে মোকাবেলা করেন আর্থিক সংকট । আর্থিক দৈন্যতায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। কাগজ, কলম, ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন ঘটে যাওয়া ঘটনা সংগ্রহ করেন । কখনও কখনও এসব সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মারাত্মক বিপদে ফেলেন নিজের জীবন । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকরা মফস্বল সাংবাদিকদের কেবল পরিচয়পত্র হাতে তুলে দেন । পরিচয়পত্র দেয়ার সময় বলা হয় যে তাদের বিনামূল্যে মানুষের সেবা করতে হবে। ওয়েজ বোর্ডেও আওতায় নেই তারা। এসব পরিস্থিতি সত্ত্বেও মফস্বলের সাংবাদিকরা তাদের অঞ্চলের মানুষের সেবা করার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছেন, তবে দুর্ভাগ্যক্রমে তাদেরকে কখনও মূলসোতের সাংবাদিক সমাজের সুবিধাদিতে যুক্ত করা হয়না। ঝড়- বৃষ্টি উপেক্ষা করে মফস্বলের সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহে যান। তাদের পুরো ঘটনা কভারেজ দিতে হয় । সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হলে পান না চিকিৎসা সুবিধা। তারপরও তারা রিপোর্ট করেন, মাদকের বিরুদ্ধে, শিক্ষার সমস্যা, কর্মসংস্থান, পানির সঙ্কট, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিরুদ্ধে, সমাবেশ ও বিক্ষোভ সমাবেশের সংবাদ। অনেক আশায় প্রেরতি সংবাদটি মূল পাতায় স্থান করার আশায় থাকলেও কখনও প্রকাশ হয় আবার কখনো প্রকাশ হয় ছোট আকারে ভেতরের পাতায়। সাম্প্রতিক দিনগুলিতে করোনার ভাইরাস সম্পর্কিত সকল সংবাদই করতে হয় তাদের। মফস্বলে সাংবাদিকতা সত্যের প্রতিচ্ছবি। মফস্বল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো এবং বন্দুকের কাজটি করা হয় তাদের কলমের সাহায্যে। এই সাংবাদিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হলে সাংবাদিকদের মূল স্রোতে আনার চেষ্টা করা হবে। তাদেরকে সাংবাদিকদের জাতীয় সংগঠনগুলিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। মফস্বলের সাংবাদিকরা সংবাদপত্র তথা মিডিয়ার মেরুদ-ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকদেও উচিত মফস্বল সাংবাদিকদের সন্মানীভাতা সুবিধা ও অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সাংবাদিকতার বিকাশ হলেও মফস্বল সাংবাদিকরা এখনও সমস্যা ও অসুবিধাগুলির মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। মূল ধারার সাংবাদিকতা বিভাগের কর্তৃপক্ষ এবং কর্মকর্তা ও কর্মীদের ন্যায়সঙ্গত উদ্দেশ্যে একত্রে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। লেখক: খায়রুল আলম রফিক, সভাপতি (বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ) (খোলা কলামে প্রকাশিত সব লেখা একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে পত্রিকার কোন সম্পর্ক নেই)।