মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
“এবারের ঈদ” লেখক ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবু হায়াত নুরুন্নবী ৷
আমাদের দেশে ঈদ মানেই আনন্দের অন্য একটা মাত্রা।
ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই শপিং এর ধুম পরে যাওয়া।
ধনি, গরিব, কিশোর, যুবক, নারী,পুরুষ সহ সব বয়সের মানুষের মাঝে চলে ঈদ আয়োজন। এ যেন গোটা জাতিকে আনন্দের অন্য একটা মাত্রায় মুখরিত করে তোলা।
চান রাতে রিকশায় গাদাগাদি করে বসে বেরিয়ে পরা।
সেলুনে সিরিয়াল দিয়ে বসে থাকা
লন্ড্রির দোকানে মাঝ রাত পর্যন্ত কাপড়ের জন্য অপেক্ষা করা।
ঈদের বাজার করতে গিয়ে বাদ পরে যাওয়া কিসমিস, মসলা, ঘি বা দুধের প্যাকেট খুঁজতে দোকানে যাওয়া।
বাসার সব থেকে ছোট সদস্যটির জন্য স্যান্ডেল কেনা ভুলে যাওয়ায়, তা কিনতে রাতে দোকানে ছুটে যাওয়া।
গভীর রাত পর্যন্ত বাসায় সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া।
খুব সকালে রান্না ঘরের টুং টাং শব্দে ঘুম ভেংগে যাওয়া।
সেই ভোর বেলায় মায়ের কড়া গলায় ডাকাডাকি, আর গোসলে যাওয়ার বকুনি খাওয়া।
গোসল সেরে এসে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভাইয়ের সাথে গেন্জি বদল হয়ে যাওয়া।
ঈদের মাঠে যাবার আগে তাড়াহুড়োয় আতরের শিশিটা খুঁজে না পাওয়া
নামাজ শেষে কোলাকুলি করার জন্য একে অপরের জন্য অপেক্ষা করা।
বাসায় এসে বড়দের সালাম করে সেলামির জন্য ছটফট করা।
সব মিলিয়ে আমাদের দেশে ঈদ মানেই আনন্দে ভরপুর।
…কিন্তু এবারের ঈদ ছিল সম্পূর্ন ভিন্নভাবে, যা আমরা কেউ কামনা করিনি।
শপিংমল গুলি ছিল নিস্তব্ধ, চান রাতে ছিল না উপচে পড়া ভিড়, রাস্তায় পথশিশুরা চাইতে পারেনি একটা নতুন কাপড়।
অসহায় মানুষগুলির সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারিনি আমরা।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেটি ঈদে বাড়ি এসে বাইক নিয়ে ঘুরতে যেতে পারেনি, পুরানো বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মাতেনি।
একটা অজানা আতংকের মাঝে ছিল এই ঈদ যা আমাদের কাম্য ছিল না।
দোকান আর শপিংমল গুলির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় বাচ্চা গুলি অপেক্ষা করতো আপনার ব্যাগ হাতে বের হওয়ার।
সাথে সাথে ঘিড়ে ধরতো কিছু পাবার আশায়।
পেয়েও যেত অনেক কিছু, তাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিত সবাই, এই আনন্দটা ছিল স্বর্গীয়।
কিন্তু এবার সেটা হয়ে উঠেনি, তাদের ঈদ কি ভাবে কাটলো জানা হল না এবার।
এই ঈদ আমাদের কারোরই কাম্য ছিল না।
ঈদের দিন রাস্তায় ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ সেজেগুজে বের হতো… কেউ গাড়ি নিয়ে .. আর কেউ রিকশায়. কেউ বাইকে.. কেউবা দল বেঁধে পায়ে হেটেই ঘুরতে বের হত। অসাধারন এক আনন্দ মুখর দৃশ্য…..
যা দেখা যায়নি এই ঈদে,
এই ঈদ কারোই কাম্য ছিল না।
করোনায় আক্রান্ত পরিবার গুলি কি কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে এবারের ঈদের সময়টা পার করছে, তা ভাবতেও আতংকিত হই।
আমরা যখন অনেকে ঈদের নামাজ কিভাবে পড়বো ভাবছিলাম, তখন অনেক পরিবার তার করোনা আক্রান্ত প্রিয়জনের শারীরিক অবস্থা জানার জন্য হাসপাতালে ছুটছিল।
আজকের মত কঠিন একটা সময়ে আপনি কিংবা আমি, সুস্থ থাকাটাই হয়ত আমাদের জন্য প্রতি মূহুর্তে ঈদ।
আজকের দিনে আপনার পরিবারের কেউ অসুস্থ না এটা ভেবে খুশি থাকাটাই হয়ত একটা ঈদ।
সব মেনে নেয়ার পরেও একটা অজানা আতংকে আচ্ছন্ন করে রাখেছে আমাদের।
সব কিছু থেমে গেছে,
প্রকৃতি তুমি বড়ই বৈচিত্রময়।