বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনী আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় তার ফাঁসি কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। পরে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে।
ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১২টা ১ মিনিট। জল্লাদ শাহাজাহান ও তার দল খুনী আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করে।
এর আগে কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শনিবার সকালে ও দুপুরে ফাঁসির প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করে কারা কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
প্রস্তুত করা হয় ফাঁসির মঞ্চ। মঞ্চের লাইট জ্বালিয়ে দিনের বেলাতেই জল্লাদ শাহাজাহান ও তার দল ট্রায়ালও দেয়।
নিয়ম অনুযায়ি মাজেদকে গোসল করানো হয়। রাতের খাবারও খাওয়ানো হয় তাকে। তওবা পড়ানো শেষে নেওয়া হয় ফাঁসির মঞ্চে। কার্যকর করা হয় ফাঁসি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কারা কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়।
নারকীয় এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আবদুল মাজেদ। ২৩ বছর ধরে ভারতের কলকাতায় পালিয়ে থাকা মাজেদ দেশে ফেরে গত ১৬ মার্চ।
বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনীকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে হাজির করা হয় আদালতে।
শুনানি শেষে মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। নেয়া হয় কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
বুধবার দুপুরে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবারও হাজির করা হয় মাজেদকে। রাষ্ট্রপক্ষ তার মৃত্যু পরোয়ানা জারির আবেদন জানান। আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন।
ওইদিনই মাজেদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করে। আবেদনটি খারিজ হওয়ার পর খুনী মাজেদকে ফাঁসি কার্যকর করা হলো।
ইতিহাসের নৃশংসতম এ হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতাসীনদের উদাসীনতায় প্রকৃত খুনীরা ২১ বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলো। ওই সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদেরকে লালন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পিছিয়ে যায় বিচার প্রক্রিয়া।
২০০৯ সালে পুনরায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কার্যক্রমের গতি পায়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ৫ খুনী ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর হয়।
চিহ্নিত বাকী খুনিদের মধ্যে আব্দুল আজিজ পলাতক অবস্থায় মারা যায়। বাকিরাও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছে।