সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি:
ফেনীর সোনাগাজীতে অপহরণের তিনমাস পাঁচদিন পর ধর্ষণ মামলার বাদি এক প্রবাসীর স্ত্রীকে (২১) ফেনী শহর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৪ মার্চ) রাতে ফেনী শহরের পূর্ব দেবীপুর এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। জেঠা শ্বশুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করায় গত ৯ ডিসেম্বর ফেনীর আদালতপাড়া থেকে তিনি অপহরণের শিকার হন।
উদ্ধারের পর ওই নারী পুলিশকে জানায়, অপহরণের তিনদিন পর রাতের বেলায় ফেনী শহরের একটি বাসায় নিয়ে তার জেঠা শ্বশুর শফি উল্যাহর ছেলে মো. রিয়াদ ও ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ছোট ধলিয়া এলাকা মোরশেদ আলম স্বপনসহ তিনজন মিলে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওষুধ খাইয়ে এবং ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। এর কিছুক্ষণ পর তার মৃত সন্তান প্রসব হয়। পরে তাকে ওই বাসায় বেধে রেখে সন্তানটি রিয়াদ ও মোরশেদ অন্য কোথাও নিয়ে গেছে।
পুলিশ জানায়, উপজেলার ছাড়াইকান্দি এলাকার এক ওমান প্রবাসীর স্ত্রী তার জেঠা শ্বশুর শফি উল্যাহকে আসামি করে গত ২২ নভেম্বর সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
এতে বলা হয়, ওই নারীর স্বামী দুই বছর আগে ওমান চলে যান। গত বছরের ১৮ জুন ওই ঘরে অন্য কেউ না থাকায় তাকে (নারী) একা পেয়ে ধর্ষণ করেন জেঠা শ্বশুর শফি উল্যাহ। পরে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানতে পারেন ওই নারী গর্ভবর্তী।
মামলা দায়েরের পর ২৬ নভেম্বর অভিযুক্ত শফি উল্যাহ ফেনীর আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। এসময় মামলার বাদিও একই আদালতে হাজির হন। বাদি আদালতে লিখিত আবেদনে এ মামলার আসামিকে জামিনের আপত্তি নেই বলে জানান।
লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই ঘটনার রাতে একজন অপরিচিত লোক তার ঘরে ঢুকে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। তার শ্বশুরদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকায় শাশুড়ির কথামতো ওই মামলা করেছেন।
পরে ওই মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে আদালতের আদেশে বেঞ্চ সহকারী রবিউল ইসলাম বাদি হয়ে ওই নারীর বিরুদ্ধে ফেনীর আদালতে মিথ্যা মামলা করায় আরেকটি মামলা করেন। পরে মিথ্যা ধর্ষণের মামলা করায় বাদিকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত।
গতকাল রোববার সোনাগাজী মডেল থানায় ধর্ষণ মামলার বাদি ওই নারী পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। একজন আইনজীবী, রিয়াদ ও মোরশেদ মিলে আমাকে মামলায় সহযোগিতা করার কথা বলে একটি কাগজে আমার নাম লিখে নেয়। তারা আমাকে অনেক ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়েছে।
গত ৯ ডিসেম্বর কারাগার থেকে আমি বের হলে রিয়াদ ও মোরশেদ আমাকে একটি গাড়িতে করে একটি বাসায় নিয়ে আটক করে রাখে। দুই-তিনদিন পর তার মগদু’জনসহ আরও একজন মিলে আমাকে জোরপূর্বক ওষুধ খাইয়ে ও ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে আমার সন্তানকে মেরে ফেলে। পরে আমার মৃত সন্তান প্রসব হয়। তখন আমি সাত মাসের অন্তসত্ত্বা ছিলাম।
এরপর তারা আমাকে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করাসহ বিভিন্ন ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে টাঙ্গাইলে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় রেখে আসে। সেখানে রিয়াদের একবন্ধু আমাকে বাজার করে দিত। আমি বাসা থেকে বের হতে পারতাম না। প্রায় দুইমাস পর আমি কৌশলে ওই বাসা থেকে বের হয়ে মুঠোফোনে আমার ছোট ভাইকে বিষয়টি বলি। পরে সে টাঙ্গাইলে গিয়ে গোপনে আমাকে ফেনী নিয়ে আসে।
তিনি বলেন, ফেনী আসার পর আবারও রিয়াদ ও মোরশেদ আমাকে ধরে নিয়ে দেবীপুর একটি বাসায় আটকে রাখে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাগাজী মডেল থানার উপ-পরির্দশক (এসআই) মো. আনোয়ার হুসেন বলেন, শনিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনী পৌরসভার পূর্ব দেবীপুর এলাকার একটি বাসা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মঈন উদ্দিন আহমেদ অপহরণের তিনমাস পর মামলার বাদিকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাত করানোর অভিযোগে রিয়াদ ও তার বন্ধু মোরশেদসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।