খায়রুল আলম রফিক, কুমিল্লা থেকে ফিরে
তাদের ১৫ জনই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী । তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হলেও তারা এখন কোটিপতি। কর্মস্থল কুমিল্লা ছাড়াও বিভিন্নস্থানে বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে তাদের।
অভিযোগ রয়েছে, তাদের মাধ্যমেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ঘুষ- দুর্নীতি অনিয়ম সম্পাদিত হয় । সংশ্নিষ্টরা মনে করেন, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বেরিয়ে আসবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কালো বিড়ালগুলোর সব অজানা তথ্য। হাসপাতালের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতির শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দুদক কর্তৃপক্ষ গোপন নজরদারিতে রেখেছে বলে জানা গেছে। এমন বিলাসী জীবনযাপনের টাকার উৎস কোথায়? জানতে চাওয়া হলে তাদের কেও কেও বলেন, ‘আমাদের লেভেলে অনেকেই তিন-চারটি বাড়ি করেছে। আমরা সে তুলনায় বেশি করিনি । সম্প্রতি সংবাদপত্রে তাদের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশ হয় ।
সংবাদে বলা হয়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩য় শ্রেণির ১৫ জন কর্মচারি মিলে আট কোটি টাকায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়েছেন। কুমিল্লায় দুদকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সামনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাড়িটি। অল্প বেতনের এসব কর্মচারি দুদকের চোখের সামনে কীভাবে এই বাড়ি বানালেন এনিয়ে গোটা কুমিল্লাজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাড়ি বললে ভুল বলা হবে। আট শতাংশ জমিতে আলিশান অর্থাৎ রীতিমতো ছয় তলা বিশিষ্ট প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছে। বাড়ির প্রতিটি ফিটিংস খুবই উন্নত।
বিলাসী উপকরণে ঠাসা রাজকী’য় বাড়িটি দেখতে কুমিল্লা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের লোকজন ছুটে আসেন। স্থানীয়রা বলছেন,কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩য় শ্রেণির ১৫ জন কর্মচারি ইউনাইটেড প্লেস নামের বাড়ি অর্থাৎ এই আবাসনের মালিক। হাসপাতালের প্রধান সহকারি কাম হিসাবরক্ষক দেলোয়ার হোসেন, নার্স সাহানা আক্তার, আল মামুন, রায়হানা আক্তার, ফার্মাসিস্ট খাইরুল ইস’লাম খান,আজিমউদ্দিন,প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসান, হারুনুর রশিদ তার স্ত্রীর নামে, ফারুক আহমেদ তার স্ত্রী’র নামে, ফারুক আলম ভূইয়া তার স্ত্রী’র নামে শারমিন আক্তার এবং আকলিমা আক্তার এই বাড়ির মালিক।
অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯২ সাল থেকে দীর্ঘসময় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই কর্মচারিরা কর্মরত আছেন। হাসপাতালে দু’র্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে তারা এখন কোটি টাকার মালিক। নিজেদের ধন-সম্পদ আর আভিজাত্য জানান দিতে মনোরম ডিজাইনে গড়ে তুলেছেন প্রাসাদোপম অট্টালিকা। এতে তাদের খরচ হয়েছে অন্তত আট কোটি টাকা। দীর্ঘ সময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন তারা। অজ্ঞাত জাদুস্পর্শে অঢেল ধন-সম্পদ যেন ফুলেফেঁপে উঠেছেন তারা। তন্মধ্যে হিসাবরক্ষক দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা কামরুল হাসান দুর্নীতির মহাগুরু নামে অবিহিত। ইউনাইটেট প্লেস এর চেয়ারম্যান ও হাসপাতালের কর্মচারি খায়রুল ইস’লাম খান জানান, আম’রা হাসপাতালের ১৫ জন স্টাফ মিলে এই আবাসন গড়ে তুলেছি। এটা কোন দু’র্নীতির মধ্যে পড়ে না। তবে, ২/১ জন দুর্নীতিবাজ আমাদের মধ্যে আছে। তাদেরকে নিয়ে ঝুট ঝামেলায় আছি।
স্থানীয়রা বাড়িটি নির্মাণে ৮ কোটি খরচ হয়েছে জানালেও ইউনাইটেট প্লেস এর চেয়ারম্যান ও হাসপাতালের কর্মচারি খায়রুল ইসলাম খান জানান, এটা ঠিক নয়। বাড়িটি নির্মাণে ৪/৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আঞ্চলিক দুদক অফিসের সামনে এই ভবন জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন জানান, দুদক জানে আমরা মিলে মিশে এই ভবন নির্মাণ করছি।