যীশু সেন,
সঙ্গীত শিল্পী রিষু তালুকদার। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের নিয়মিত তালিকাভুক্ত শিল্পী। চট্টগ্রামে সংস্কৃতি জগতে বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয় প্রতিষ্ঠা করে ছাত্র-ছাত্রীদের দীর্ঘ পনের বছর শুদ্ধ সঙ্গীত অনুশীলনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও জানার জন্য উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের উপর আগ্রহ সৃষ্টিতে স্বরলিপিসহ একটি ভালো গ্রন্থের কথাও ভাবেন। যদিও সঙ্গীত গুরুমুখী বিদ্যা। অবশেষে তাঁর ভাবনা বিভিন্ন রাগের উপর সঙ্গীত বিষয়ক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গ্রন্থ ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দীপিকা’ পুস্তক আকারে প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থটিতে লিপিবদ্ধ আছে সঙ্গীতজ্ঞের জীবনী, বাদ্যযন্ত্রের পরিচিতি, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষা কার্যক্রমের সিলেবাস, প্রশ্নোত্তর কণিকা, তাল পরিচিতি, আঙ্গুল চালনা, সপ্তসুর সাধনা, স্বর পরিচিতি, তবলার লহড়ায় ব্যবহৃত বিভিন্ন রাগে ও বিভিন্ন তালে নাগমা আছে। গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে দশঠাটের স্বরমালিকা ও লক্ষণ গীত, প্রায় ষাটটি রাগের আলাপ, তান, বাঁট, ঠুংরী, ধ্রুপদ, চতুরঙ্গ ও রাগপ্রধান গান । যা শুদ্ধ সঙ্গীত শিক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্রন্থে বিভিন্ন সঙ্গীতজ্ঞের রচিত বন্দিশ এবং বিভিন্ন লয়কারী সন্নিবেশিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রাগের বিশ্লেষণ ও পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই গ্রন্থটি অতুলনীয়। কালের পরিক্রমায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনেক মণি-মুক্তা হারিয়ে গেলেও এই বইটিতে অনেক মণি-মুক্তা সংযুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত সাধনায় যথেষ্ট উপকারে আসবে এবং শিল্পীদেরও সহায়ক হবে গ্রন্থটি । শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জ্ঞান একজন সঙ্গীতশিল্পীর বোধ, মেধা ও জ্ঞানকে শাণিত করে। গুরুর সান্নিধ্য ছাড়া কখনো পরিপূর্ণ শিক্ষা লাভ করা যায় না। তথাপি একটি ভালো গ্রন্থের সহায়তায় একজন শিক্ষার্থী ও শিল্পীর জ্ঞানকে আরো বেশি শাণিত করতে পারে। শুদ্ধ সঙ্গীত মানুষকে সুশৃঙ্খল করে, মনকে প্রসারিত করে এবং সমাজ তথা দেশকে সমৃদ্ধ করে। ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দীপিকা’ উচ্চাঙ্গ বিষয়ক গ্রন্থটি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং একজন বিদ্যার্থীকে সঙ্গীতচর্চায় সঠিক দিক-নির্দেশনা দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
গত ১৮ ডিসেম্বর ‘১৯ খ্রি. বুধবার চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে ‘শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দীপিকা” গ্রন্থটি মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বিপুল সংখ্যক সঙ্গীতপ্রেমী উপস্থিতি হয়েছিল। বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়ের আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের অ্যাটাচি শ্রী লোকনাথ চ্যাটার্জী। বিশেষ অতিথি ছিলেন প-িত নির্মলেন্দু চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক এজাজ ইউসুফী। ২১৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণ করে বেশ ভাল লেগেছে । বইটি উৎসর্গে লেখকের পিতা রাখাল তালুকদার ও মাতা কনিকা তালুকদার এবং সঙ্গীতগুরু পণ্ডিত নির্মলেন্দু চৌধুরী, শ্রীমতি জয়ন্তী লালা, অর্ণব রায় কার্তিক, তবলা শিল্পী পলাশ দে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। অফসেট কাগজে মূদ্রিত ও ফোর কালার নজরকাড়া চমৎকার প্রচ্ছদটি অলংকরণ করেন দীপক কুমার দত্ত। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অতিথিদের হাতে গ্রন্থটি ছবি স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করছে। সৌন্দর্য বর্ধিত গ্রন্থটি মূল্য রাখা হয়েছে ২৭৫/- কথায়- দুই শত পঁচাত্তর টাকা। গ্রন্থটি পাওয়া যাবে বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়, দেওয়ান বাজার , চট্টগ্রাম । মোবাইল নম্বর ০১৮১৮২২৮৬৩৯, ০১৮১৫৬২৬৬৪৯, গণেশ এন্ড সন্স , আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। বাতিঘর, জামালখান, চট্টগ্রাম। ভাণ্ডারী মিউজিক্যাল সেন্টার চট্টগ্রাম।
সঙ্গীতশিল্পী রিষু তালুকদার চট্টগ্রাম জেলা পটিয়া থানাধীন ধলঘাট গ্রামে ১৯৮১ সালের ৮ মে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দর্শন শাস্ত্রের উপর এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। বইয়ের প্রকাশক ছিলেন অপর্ণা তালুকদার। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দীপিকা গ্রন্থটি নাম অলঙ্করণে পণ্ডিত নির্মলেন্দু চৌধুরী। আমি বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি, শিক্ষার্থীরা উপকৃত হলে লেখকের পরিশ্রম সার্থক হবে। মনে করি এই গুণী শিল্পী রিষু তালুকদারের সৃজনশীল সকল কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে এবং সঙ্গীত গ্রন্থটি পাঠক ও শ্রোতাদের নিকট যেন সমাদৃত হয় এই কামনা নিরন্তর।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিষ্ট, সংগঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মী।