বিশেষ প্রতিবেদকঃ শাহরাস্তি থেকে উধাও হওয়া অগ্রগতি সংস্থার এখনো হদিস খুঁজে পায়নি পুলিশ। গত ১২ ডিসেম্বর শাহরাস্তির উপলতা এলাকা থেকে গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয় সংস্থাটি। এরপর থেকে এ সংস্থার কোনো কর্মকর্তাকেই সনাক্ত করা যায়নি। এদিকে টাকা হারিয়ে সাধারণ সদস্যরা প্রতিদিনই অগ্রগতি সংস্থার কার্যালয়ে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। সংস্থাটি উধাও হওয়ার পর স্থানীয়রা বাড়ির মালিককে অভিযুক্ত করে আসছেন। তাদের ধারণা এ সংস্থার সাথে বাড়ির মালিকের যোগসূত্র রয়েছে। বাড়ির মালিক সংস্থাটিকে ভাড়া প্রদানের পূর্বে যাচাই-বাছাই ছাড়াই চুক্তিনামা সম্পন্ন করেছেন। তাই এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এদিকে বাড়ির মালিক মোঃ জাকির হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম শাহরাস্তি থানায় নিরাপত্তা চেয়ে অভিযোগ করেছেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহআলম জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর সাথে স্থানীয় কেউ জড়িত আছে কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে স্থানীয়দের নাম উল্লেখ করে বাড়ির মালিকের থানায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সৈকত দাশগুপ্তা জানান, গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হওয়া সংস্থাটির বিরুদ্ধে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। বাড়ির মালিক নিরাপত্তা চেয়ে অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি দেখছি।
এদিকে উক্ত সংস্থায় বিভিন্ন পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীরা জানান, তারা বাড়ির মালিকের স্ত্রী নাজমা বেগমের আশ্বাসে জামানত দিয়ে উক্ত সংস্থায় নিয়োগ লাভ করেন। পূর্ব উপলতা গ্রামের মোঃ সেলিমের মেয়ে নাজমা আক্তার জানান, তিনি ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে অফিস সহকারী পদে ১৯ হাজার টাকা বেতনে যোগদান করেন। তিনি নাজমা বেগমের হাতে উক্ত জামানতের টাকা প্রদান করেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর চাকুরিতে যোগদান করেন। তিনি আরও জানান, ঋণ পাওয়ার আশায় তার স্বামী সফিউল্লার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সংস্থায় সঞ্চয় হিসাবে জমা রাখেন।
সাহাপুর গ্রামের ফরিদা আক্তারের বাবা দুলাল মিয়া বলেন, আমি ওই বাড়িতে রঙের কাজ করতাম। বাড়ির মালিক এনায়েতের সাথে আলাপ করে আমার মেয়ে ফরিদাকে ২০ হাজার টাকা জামানতের মাধ্যমে এ সংস্থায় চাকুরির জন্যে সম্মতি দিই।
দৈকামতা গ্রামের মহিনের স্ত্রী শিরিনা আক্তার জানান, বাড়ির মালিকের স্ত্রী নাজমা বেগমের আহ্বানে ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে আমি লোন অফিসার পদে নিয়োগ লাভ করি। শ্রীপুর গ্রামের মোঃ সোলেমানের মেয়ে মনিহার জানান, তিনি একই কারণে ১০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে রিসিপশন পদে যোগদান করেন। কাজিরকাপ গ্রামের সিরাজুল হকের মেয়ে ফাতেমা আক্তার জানান, তিনি নাজমার মাধ্যমে কোনো জামানত ছাড়াই সদস্য সংগ্রহ পদে যোগদান করেন।
এদিকে যোগদানকৃত কর্মচারীরা সংস্থার কর্মকর্তাদের নাম জানলেও তাদের সঠিক ঠিকানা জানা নেই বলে জানান। তবে উল্লেখিত পদ-পদবি ও নাম সঠিক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে সংস্থাটির কার্যালয় এখনো তালাবন্ধ রয়েছে। গত ১৯ ডিসেম্বর উক্ত কার্যালয় থেকে দুর্গন্ধ বের হলে বাড়ি মালিক থানা পুলিশকে অবহিত করলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহআলম কার্যালয়টি পরিদর্শন করেন। তিনি বাড়ির মালিককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত আবেদনের নির্দেশ দেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, তালা খোলার জন্যে আমাদের অনুমতি নেই। তাই নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে সংস্থার কার্যালয়টি খোলা যেতে পারে।