বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের অন্যতম পুরোনো দল। এই দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই দল টানা ১১ বছর ক্ষমতায় আছে। এর আগেও নব্বই-পরবর্তী সময়ে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল।
সব মিলিয়ে এটি খুবই অভিজ্ঞ একটি রাজনৈতিক দল, যার বিস্তৃতি তৃণমূল পর্যন্ত। স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেওয়া এই দলের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এই দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অর্থনৈতিক অর্জনও প্রশংসনীয়।
তবে দীর্ঘ এই পথচলায় সরকার ও দল মিলেমিশে গেছে। সরকারকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই। তাই সরকারের ভালো-মন্দের দায়দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। সরকারপ্রধান ও দলের প্রধান একই ব্যক্তি হলে এমন অসুবিধা হয়। আবার দলের নেতারাই সরকারে থাকেন। সব মিলিয়ে দল ও সরকারের চেহারাটা একই রকম মনে হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই এ জন্য সরকার ও দলের মধ্যে একটা পার্থক্য থাকে।
একজন নাগরিক হিসেবে আমার প্রত্যাশা হচ্ছে, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতারাই নেতৃত্বে থাকবেন। এখানেই আওয়ামী লীগকে হোঁচট খেতে দেখছি। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে কিছু নেতা-কর্মীর নৈতিক স্খলনের কথা বলেছেন। এত বছর ক্ষমতায় থাকায় দুর্নীতির নানা অভিযোগ আসছে। প্রধানমন্ত্রী কিছু পদক্ষেপ নিলেও দুর্নীতির শিকড় এতটাই গভীরে যে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী একাই সবকিছু করছেন।
দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান সুশাসন নিশ্চিত করতে কোনো রকম সহায়তা করতে পারছে না। এমন অনেক উদাহরণ তৈরি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ও যানবাহনের অবস্থাটা দেখেন।
এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী আছে? সরকার সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি আইন করল। জনগুরুত্বপূর্ণ সেই আইন বাস্তবায়ন করতে পারল না। সরকার ও সরকারি দলকে জিম্মি করে ফেলা হলো। এর ফলে আইন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারল না।
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়ে গেছে। এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা খুবই জরুরি। নির্বাচন কমিশনে যা ঘটছে, তা কখনোই ঘটেনি। নিয়োগসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে অন্য কমিশনারদের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ। এ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়েছে। কমিশনের অবস্থাটা এখন দেশে-বিদেশে সবাই জানে।
তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানার রাজনীতি করতে হবে। দেশের তরুণেরা কিন্তু রাজনীতিবিমুখ হচ্ছে। ছাত্রলীগের রাজনীতির ওপর প্রধানমন্ত্রী কতটা নাখোশ, সম্প্রতি তা দেখা গেল। মেধাবীরা আগে ছাত্ররাজনীতিতে আসত। সেই ধারাটা বন্ধ হয়ে গেল। তরুণদের ছাত্ররাজনীতি অপছন্দের বড় কারণ লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই। এই প্রজন্মের বেশির ভাগই রাজনীতি নিয়ে ভাবে না।
রাজনীতির প্রতি তাদের চরম অনীহা দেখতে পাই। তাদের চেষ্টা এখানে ১০-১২ বছর পড়াশোনা করেই বিদেশে চলে যাওয়া। যদিও শিক্ষিত বেকার বাড়ছে, তাদের কাজের সুযোগও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
আগামী বছরগুলোতে বিশাল দায়িত্ব আওয়ামী লীগের ওপর। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতৃত্ব ছাড়া সামনে এগোনোর সুযোগ খুবই কম। অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, মানবসম্পদের সূচকে অগ্রগতি আছে। কিন্তু এগুলো তো ধরে রাখতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মোহ করা। এটা করতে পারলে অনেক কঠিন কাজই সহজ হয়ে যাবে।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার