জাতীয় সংসদের বর্তমান তিন সংসদ সদস্য, গণপূর্তের ১৭ প্রকৌশলী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমসের ৫ কর্মকর্তাসহ ১০৫ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ক্যাসিনো কান্ডের অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে এসব ব্যক্তির ব্যাংক ও আর্থিক লেনদেনের তথ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
রোববার পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সই করা চিঠি বিএফআইউর প্রধান বরাবর পাঠানো হয়েছে। যেখানে নাম, ঠিকানা ও পদবি উল্লেখ করে তাঁদের সব তথ্য চাওয়া হয়েছে। দুদকের উর্ধ্বতন একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর ৪৩ জনের তথ্য চেয়ে বিএফআইউতে চিঠি পাঠানোর কথা দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত নিশ্চিত করেছিলেন। এবার ১০৫ জনের তালিকায় তথ্য-উপাত্ত তলব করলো সংস্থাটি। এছাড়া ৩৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আর এ পর্যন্ত ১৫ মামলা দায়ের করেছে দুদক।
অনুসন্ধানের স্বার্থে যাঁদের ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ পংকজ নাথ, সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল হক ভূঁইয়া, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাতেনুল হক ভূঁইয়া, মো. জহুর আলম, হারুনুর রশিদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মোমিনুল হক, ঢাকা দক্ষিণের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ওরফে ম্যাজিক রতন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক ওরফে মঞ্জু।
ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতার হিসাব চাওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন যুবলীগ দক্ষিণের সহসভাপতি সারোয়ার হোসেন ওরফে মনা, যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম, যুবলীগ নাখালপাড়া-তেজগাঁও শাখার কাজল, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তাবিবুল হক, শাহেদুল হক, তাঁর স্ত্রী সারিনা তামান্না হক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য সাবেক নেতা কে এম মাসুদুর রহমান, তাঁর স্ত্রী লুৎফুন্নাহার লুনা, বাবা আবুল খায়ের খান, মা রাজিয়া খান, যুবলীগ দক্ষিণের সহসভাপতি মুরসালিক আহমেদ, তাঁর স্ত্রী কাওসারী আজাদ, বাবা আবদুল লতিফ, মা আছিয়া বেগম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা কামরান প্রিন্স মোহাব্বত, যুবলীগের আকিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান হোসেন খান, কেন্দ্রীয় সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক তসলিম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক কায়সার আহমেদ, যুবলীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং যুবলীগের গাজী সারোয়ার।
দেশের বাইরে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও নাদিম, মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোম্পানির ঠিকাদার জামাল হোসেন, জি কে শামীমের স্ত্রী শামীমা সুলতানা, সহযোগী জিয়া, নাঈম, শেখ মাহাম্মুদ জুনায়েদ, এস এম আজমুল হোসেন ও ব্রজ গোপাল হালদারের হিসাব চাওয়া হয়েছে।
বান্দরবানের সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টারের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, এমডি ফজলুল করিম চৌধুরী, পরিচালক এম মহসিন, উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, জিয়া উদ্দিন আবীর, জাওয়াদ উদ্দিন, বনানী গোল্ড ক্লাবের আবদুল আওয়াল, আবুল কাশেম, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ–সংশ্লিষ্ট এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফিন্যান্সের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, শরফুল আওয়াল, পদ্মা অ্যাসোসিয়েটস ইঞ্জিনিয়ার্সের ঠিকাদার মিনারুল চাকলাদার, সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সের ঠিকাদার রেজোয়ান মোস্তাফিজ, মগবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনির জাকির, নয়াটোলার সেন্টু, শোভন, বাড্ডার নাসির, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের আবুল কালাম, শিক্ষা অধিদপ্তরের ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম, ঢাবি এফ রহমান হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের হিসাব চাওয়া হয়েছে।
তালিকায় রয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন, রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, আবদুল হাই, হাফিজুর রহমান মুন্সী, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু, শওকত উল্লাহ, ফজলুল হক, রোকন উদ্দিন, আফসার উদ্দিন, স্বপন চাকমা, ইলিয়াস আহমেদ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মোমিন চৌধুরী, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান, সাজ্জাদ, উপসহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর সরকার, খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলম।
কমলাপুর আইসিডির কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত কমিশনার মো. মাহমুদুল হাসান, সহকারী কমিশনার কানিজ ফারহানা, আবুল কাশেম, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তুহিনুল হকের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে যাঁদের ব্যাংক ও আর্থিক লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল হক আরমান, জি কে শামীম, শামীমের মা আয়েশা আক্তার, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক, যুগ্ম সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম, যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান, তারেকুজ্জামান রাজীব, মিজানুর রহমান, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান ও যুবলীগের নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন। এঁদের সবার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। যার তদন্ত চলমান।
সেপ্টেম্বরে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্য ন্ত ১৫টি মামলা করে দুদক। ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই রুপন ভূইয়া, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, কলাবাগান ক্লাবে সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ এবং যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান এবং কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান ও যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করে দুদক