নিরেন দাস(জয়পুরহাট)প্রতিনিধিঃ-দুর্নীতির অভিযোগে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র ও আক্কেলপুর উপজেলা আঃলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) জয়পুরহাট সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেছেন আক্কেলপুর উপজেলা আঃলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান ও আক্কেলপুর পৌর আঃলীগের সাবেক আহবায়ক এনায়েতুর রহমান আকন্দ স্বপন।
মামলার আসামীরা হলেন,(১) আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র,সাবেক রুকিন্দীপুর পরিষদের চেয়ারম্যান ও আক্কেলপুর উপজেলা আঃ লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর, (২) আক্কেলপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আতিকুর রহমান, (৩) আক্কেলপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক,বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জামশেদ আলম,(৪) আক্কেলপুর মহিলা কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক মোঃ ফারুক আলম চৌধুরী।
মামলার শুনানী শেষে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক (এম.এ.রব) হাওলাদার আমলে নিয়ে মামলা দু’টি সঠিক তদন্তের জন্য করার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে দায়ের হওয়া মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে,জাল সনদে চাকরী করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২০০৯-ইং সালের ২৯ জুলাই আক্কেলপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক মোঃ ফারুক আলম চৌধুরী কে বরখাস্ত করে তৎকালীন কলেজটির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ। যে বিষয়টি রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ অবহিত করলে গত ২০১১-ইং সালের ২০ জানুয়ারি মাসে শিক্ষা বোর্ড আইনি শাস্তির পরিবর্তে অভিযুক্ত গ্রন্থাগারিক ফারুক চৌধুরী কে যোগদান করে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ডিপ্লোমা কোর্স সম্পাদনের জন্য অভিযুক্ত ফারুক চৌধুরী কে ১ বছর ছুটি দেওয়ার ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে অধ্যক্ষ কে। শিক্ষা বোর্ডের ওই বে-আইনি সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে কলেজ পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি,সাবেক উপজেলা আ”লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত নাজমুল হুদা হালকু উচ্চ আদাল তে রীট পিটিশন করলে আদালত শিক্ষা বোর্ডের ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। যাহা গত ২০১৫-ইং সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকে। কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি পৌর মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর,কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আতিকুর রহমান ও অপর সদস্য বিএনপি নেতা জামশেদ আলম কে সাথে নিয়ে গত ২০১৪-ইং সালের ২৩ জুলাই মাসে একটি সভা ডেকে ওই গ্রন্থাগারিক কে অবৈধ ও বে-আইনীভাবে বেতন প্রদান করেন তারা।
এ ছাড়া তাঁরা অবৈধ গ্রন্থাগারিক ফারুক চৌধুরীর কাছ থেকে এমপিও’র সরকারি টাকা সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎও করেছেন। অপর মামলা সূত্রে জানা গেছে,আক্কেলপুর উপজেলা আঃ লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মজিবর রহমান একজন চাতাল ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স রোজী চাউল কল। আক্কেলপুর পৌরসভার গেট সহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজে অংশ নেওয়ার জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হলে তিনি তাতে অংশ নেন। যা গত ২০১৮-ইং সালের ২৫ ডিসেম্বর দরপত্র বাক্সে দাখিল করা দরপত্র অনুযায়ী ওই কাজের সর্বচ্চ দরদাতা হিসেবে চূড়ান্ত দরপত্র রিপোর্টে এক নম্বরে স্থান হয় মজিবর রহমানের। যাবতীয় কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্বেও পৌর মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলে মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে তাঁর দরপত্র বাতিল করেন। পরে মোটা অর্থের বিনিময়ে সাহা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক কে তিনি বেশি মূল্যে কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেন। এতে সরকারের ৩০ হাজার টাকারও অধিক রাজস্ব ক্ষতি হলেও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হয়েছেন। একইভাবে আরও দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে দরপত্র আইন অমান্য করে অবৈধ ভাবে বেশি মূল্যে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ সম্পন্নের দায়িত্ব প্রদান করে সরকারের আরও ২ লাখ ২৯ হাজার ৭ শত ৭০ টাকার রাজস্ব ক্ষতি করেছেন। পক্ষান্তরে তিনি নিজে লাভবান হয়েছেন।
এজাহারে জানানো হয় পৌর মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর ২০১৪-ইং সালে উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আক্কেলপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। সে সময় তিনি হলফ নামায় নিজের সম্পদ উল্লেখ করেন ১৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪১২ টাকা এবং স্ত্রীর সম্পদ দেখিয়ে ছিলেন মাত্র ২৫ হাজার। বিগত ২০১৫-ইং সালের পৌরসভা নির্বাচনেও তিনি আক্কেলপুর পৌরসভায় আঃলীগের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। পৌর নির্বাচনে তিনি ২০১৫-ইং সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে দাখিল করা হলফনামায় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭২ টাকা। আর স্ত্রী নামে সম্পদ দেখিয়েছেন ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৯৬ টাকা। বর্তমানে তাঁর জয়পুরহাট শহরে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের দু টি বিলাসবহুল বাড়ি,নিজ ও স্ত্রীর নামে পৃথক দু-টি দামি প্রাইভেট কার ছাড়াও অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।
জয়পুরহাট সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে পৌর মেয়র সহ অভিযুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক দু-টি মামলা দায়ের ও দুদক কে তদন্তের জন্য আদালতের বিচারকের দেওয়া নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের স্পেশাল কৌঁসুলি নন্দকিশোর আগরওয়ালা।।
—–
নিরেন দাস,জয়পুরহাট।
মোবাঃ ০১৯১৭-২১১১১২