মো: আ: হামিদ টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:-
ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে টাঙ্গাইলে প্রায় সব কয়টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আর এতে করে বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে যমুনা নদীর পানি বিপসসীমার ৬৮ সে.মি., ধলেশ্বরী নদীর পানি ৮৯ সে.মি. এবং ঝিনাই নদীর পানি ৪৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
আর এই পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ৫টি উপজেলায় নদী তীরবর্তী প্রায় ১০৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেকেই পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর এতে প্রায় ১৭ হাজার ৮শ’ পরিবার পানি বন্দি হওয়ার আশঙ্কা মধ্যে রয়েছে। এছাড়া এসব গ্রামের রাস্তা এবং ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে ৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। আর নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন কয়েকশ’ পরিবার। এতে খাদ্য, পানির সংকট, গো-খাদ্য সংকট এবং অন্যদিকে বাসস্থানে পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তারা। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেকে গরু-ছাগল ও পরিবার পরিজন নিয়ে উচু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। আর এতে জেলার ৫টি উপজেলার আংশিক ২২ ইউনিয়নের প্রায় ১০৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর এতে পানিবন্দি অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ৮শ’ পরিবার। লোক সংখ্যা হলো প্রায় ৬৫ হাজার। উপজেলাগুলো হলো হল গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, নাগরপুর এবং টাঙ্গাইল সদর। এই উপজেলার নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চচলের মানুষ ভাঙন কবলে এবং পানিবন্দি অবস্থার মধ্যে পড়েছে।
১৯১২ হেক্টর ফসলি জমি এবং সবজি নিমজ্জিত:
জেলা কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, বন্যার কারণে জেলায় বোনা আমন ১১৭৫ হেক্টর জমি, রোপা আমন (বীজতলা) ৩৩ হেক্টও, আউশ ৬০৮ হেক্টর এবং বিভিন্ন ধরনের সবজি ৯৬ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জীত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে আরো ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এতে ফলনের ক্ষতি হতে পারে।
৬৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় এবং সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী আসতে না পাড়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯টি এবং প্রায় ৫৮টি প্রাইমারি বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পানি আরো বৃদ্ধি পেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেন জানান জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্ত আব্দুল আজিজ।
এদিকে ভূঞাপুরে বানের পানিতে ডুবে জিহাদ (১) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু জিহাদ ওই গ্রামের বিদ্যুৎ মিঞার ছেলে।
জানা যায়, উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বিদ্যুৎ মিঞার ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তিনি ও তার স্ত্রী জিনিসপত্র অন্যত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় তাদের অজান্তে এক বছরের শিশু জিহাদ পানিতে ডুবে যায়। পরে বিকাল জিহাদের লাশ ঘরের এক কোনে ভেসে উঠে।
ভাঙন ও বন্যার কারণে দিশেহারা এসব মানুষ মানববেতর জীবন যাপন করছে। জায়গাসহ ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ নি:স্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে, কেউ বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আনছের আলী বলেন, ‘অকাল বন্যা ও বৃষ্টির কারনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘরে পানি উঠার কারনে স্থানীয় বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এতে পানি ও খাবার সংকটের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
গাবসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুনিরুজ্জামান মনির বলেন, গাবসারা ইউনিয়ন পুরোটাই চরাঞ্চল। বন্যার কারণে পুরো ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বেশ কয়েকটি গ্রাম পুরোপুরি তলিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোশারফ হোসেন খান জানান বন্যার ফলে জেলার নদীতীরবর্তী ৫টি উপজেলায় আংশিক ২২ ইউনিয়নের প্রায় ১০৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর এতে করে রাস্তা এবং ফসলি জমি পানির নিচে রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে আমাদের ত্রাণ সামগ্রী অব্যহত রয়েছে। উপজেলায় ১৩০ মে.টন চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া প্রায় ৬৫ মে.টন চাল আমাদের কাছে মজুদ রয়েছে। এছাড়া আরো ৩০০ মি.টন চাল এবং ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জেলার ১২টি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রসহ সব কয়টি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা নদীগুলোতে আরো পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর পানি কমলে এসব এলাকায় ভাঙন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।