সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।
এর আগে রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
এরশাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার আত্মীয় ও জাপার সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য খালেদ আখতার।
গত কয়েকদিন ধরেই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
এর আগে শনিবার (১৩ জুলাই) এরশাদের শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়েছিলেন জিএম কাদের। সেদিন তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের শারীরিক অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। পল্লীবন্ধুকে বাঁচাতে শিরায় পুষ্টি দেওয়া হচ্ছে। কিডনি, লিভারসহ অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কোনো কাজ করছে না। সার্বিক অবস্থা যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। তার নিয়মিত ডায়ালাইসিস চলছে।
শুক্রবার (১২ জুলাই) জিএম কাদের জানিয়েছিলেন, জাপার চেয়ারম্যানের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। এরশাদ কোনো রকম নড়াচড়া করছেন না। কোনো অঙ্গ ঠিকঠাক কাজও করছে না, কৃত্রিমভাবে চলছে। সে সময়ই জানা গিয়েছিল, এরশাদের শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তাকে বিদেশে নেওয়াও যাচ্ছে না। তবে সিএমএইচেই তার বিশ্বমানের চিকিৎসা হচ্ছে। তার লিভার এখনো পুরোপুরি কাজ করছে না।
গত ২৬ জুন সাবেক রাষ্ট্রপতির শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হলে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে তার নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কিছু সংক্রমণের চিকিৎসা চলে। তার ওষুধ পরিবর্তন করা হয়। ৩০ জুন এরশাদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়। ওই দিন তাঁর ‘মৃত্যুর খবর’ ছড়িয়ে পড়েছে। মন্ত্রী-এমপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে ও অখ্যাত অনলাইন পোর্টালে এরশাদের মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল নানা গুজবের। তাঁর মৃত্যু হয়েছে ভেবে অনেকেই শোক প্রকাশ করেন।
গত ৪ জুলাই দুপুরে এরশাদকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেদিনই চিকিৎসক সূত্রে জানানো হয়েছিল, তার শারীরিক অবস্থা একেবারেই খারাপের দিকে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছিলেন তিনি। সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমত ছাড়া তার এই যাত্রায় বেঁচে যাওয়াও যে কঠিন সে বিষয়েও আভাস দিয়েছিলেন চিকিৎসকদল।
একইদিন সন্ধ্যায় সাবেক রাষ্ট্রপতির শারীরিক অবস্থার অবনতি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করছে না বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদের।
এর আগে রবিবার (৩০ জুন) রাত সোয়া ১১টার দিকে এরশাদের ছোট ভাই ও জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের জানিয়েছিলেন, এরশাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।
৩০ জুনের আগে বনানীতে দলটির কার্যালয়ে অপর এক সংবাদ সম্মেলন জিএম কাদের এরশাদের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে জানান, এরশাদের ফুসফুসে পানি এসেছে, ইনফেকশন দেখা দেওয়ায় শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। ফুসফুসে পানি জমার কারণে সকাল থেকেই তার (এরশাদ) কিছুটা শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। যে কারণে, অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
গত ২২ জুন সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করার পর এরশাদের ফুসফুস ও কিডনিতে সংক্রমণের বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর ২৭ জুন পুনরায় অসুস্থবোধ করলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে দেশেই রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।