|| ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৯শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
সাপাহারের ফজলাপুর-কামাসপুর গ্রামবাসী কাদার ভাগাড়ে
প্রকাশের তারিখঃ ১৩ জুন, ২০২৫
রতন মালাকার, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ফজিলাপুর-কামাশপুর সড়কটি। একটু টানা বর্ষণের ফলে প্রায় ৪ কিলোমিটারের রাস্তার বেশিরভাগই এখন খাল-খন্দে ভরে গেছে। এর ফলে এ রাস্তাটি এখন চলাচলের পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বুধবার (১১ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, চার কিলোমিটার রাস্তার বেশিরভাগই জায়গায় বড় বড় গর্ত তেরী হয়ে বৃষ্টির পানির সংমিশ্রণে সেগুলো কাদার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নিরুপায় এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্রই রাস্তা আর কোন রাস্তা না থাকায় এসব খাল-খন্দের মধ্যেই নিশ্চিত বিপদ জেনেও চলছে যানবাহন। কখনও সেসব যানবাহন রাস্তার মাঝখানে বিকল হয়ে গেলে বা কাদার ভাগাড়ে আটকে গেলে তৈরি হয় নতুন দুর্দশা এজন্য গ্রামবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গে
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নের সবচেয়ে অবহেলিত রাস্তা এটি। তাদের দাবী,
বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হওয়া স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা নখাই বর্মণ ও সাজেদুল আলমের কুটচালে গত সরকারের আমলে আলোর মুখ দেখেনি এই রাস্তাটি।
প্রায় ৬ হাজার মানুষের একমাত্র চলাচলের অবলম্বন এই অবহেলিত রাস্তাটি যেন এক মৃত্যু ফাঁদ। আশেপাশের কাছে এ বাজারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।কৃষক,ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী থেকে শুরু করে স্কুলগামী সবাই এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। প্রতিদিন এ সড়কে প্রায় ৬ হাজার মানুষকে চলাচল করতে হয়। তবে রাস্তার বেহাল দশার কারণে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।কেউ কেউ খাল খন্দে পড়ে গিয়ে পা-হাত ভেঙ্গে।
তাই ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
পশ্চিম কামাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘প্রতিদিন একমাত্র এ রাস্তা দিয়েই শতাধিক শিক্ষার্থীকে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে হয়। তাদের চলতে খুবই সমস্যা হয়। প্রায় সময়ই খানাখন্দে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।'
এখানে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
কামাশপুর গ্রামের বাসিন্দা ও নিশ্চিন্তপুর জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মিজানুর রহমান দূরাবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন,
'অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই অনেক ভোগান্তি নিয়েই আমাদের এ রাস্তাতে যাতায়াত করতে হয়।বিশেষ করে গর্ভবতী ও বয়ষ্কদের বেলায় অবস্থা আরো অবর্ণনীয়। রাস্তার মধ্যেই বাচ্চা প্রসবের যেমন ঘটনা আছে তেমনি অসুস্থ রোগীর রাস্তায় মারা যাওয়াও নতুন কোন ঘটনা নয়।'
কামাশপুর এলাকার আব্দুর রউফ মাস্টার বলেন, ‘প্রতিদিনই আমাদের এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। বৃষ্টিতে রাস্তাটি একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কয়েকদিন আগেও বেশ কয়েকটি ট্রলি উল্টে গেছিল।এতে মহিলা যাত্রীসহ কয়েকজন শিশু গুরুতর আহত হয়। তারপরও শত ভোগান্তি নিয়েই এ রাস্তা দিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হয়। আমরা যেন কোন এক আফ্রিকার জংগলে বাস করছি।
আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যেন দ্রুত এ রাস্তা মেরামত করা হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দা মোসাঃ উজলেফা বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে মনে হয় এতো খারাপ রাস্তা আর নেই।জন্মের পর থেকেই রাস্তাটি এরকম দেখছি।'
আম চাষিরা বলেন,কর্তৃপক্ষ যদি এ রাস্তাটি সংস্কার করতে না পারে তাহলে তারা যেন নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়। আমাদের বাগানের আম ভালো হয়ছে কিন্তু রাস্তার জন্য বাজারে নিতে পারিনা।
এ বিষয়ে ২নং গোয়ালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ রাস্তাটির টেন্ডার হয়েছিল। টেন্ডার পায় ইথেন গ্রুপ।তবে বিগত সরকার পতনের পর ইথেন গ্রুপ কতৃপক্ষ পলাতক থাকায় কাজ শুরু হয়নি।পরে রি-টেন্ডার দিলে ইথেন গ্রুপের মামলায় তা আবার আটকে যায়। রাস্তাটির জন্য প্রায় ৬ হাজার মানুষ আজ জনবিচ্ছিন্ন।’
উল্লেখ্য ইথেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল শাহরিয়ার ছিলেন পতিত হাসিনা সরকারের খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের ব্যবসায়ী অংশীদার।
এই বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী তাহাজ্জদ হোসেনের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.