|| ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
পুজোয় কষ্টের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় ভক্তি, জেনে নিন চড়কের রীতিনীতি সম্পর্কে
প্রকাশের তারিখঃ ১৩ এপ্রিল, ২০২৫
স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান
বাংলার উৎসবগুলির মধ্যে আরেকটি অন্যতম উৎসব হল চড়ক পুজো। এই চড়ক পুজো পালিত হয় চৈত্র সংক্রান্তির দিন। তবে এই উৎসব কিন্তু একদিনে শেষ হয় না, বৈশাখ মাসের প্রথম দু তিন দিন ধরে চলে এই চরক পুজোর উৎসব। গাজন উৎসবের একদম শেষে আসে এই চড়ক পুজো।
চড়ক পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় চড়কের মেলা বসে। চড়কের মেলা বাংলার বিভিন্ন জায়গায় প্রাচীন মেলা হিসেবে বিখ্যাত। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে শিব ঠাকুরের আরাধনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চৈত্র মাসে নাচ গানের উৎসব করা হয়ে থাকে। এই পুরাণ থেকেই জানা যায় চড়ক পুজোর ইতিহাস সম্পর্কে।
প্রাচীন কাহিনি অনুসারে দ্বারকার রাজা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে ভগবান শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত বাণ রাজার যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে ভোলেনাথের কৃপা পেয়ে অমরত্ব লাভের জন্য বাণ রাজা নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে মহাদেবকে তুষ্ট করেছিলেন এবং ভক্তিমূলক নাচ গান করেছিলেন ভোলেনাথের উদ্দেশ্যে। এই সময় থেকেই মূলত চড়ক পুজোর শুরু।
এই উৎসবে মূলত শরীরে আঘাত করে ভগবান ভোলেনাথ কে তুষ্ট করার প্রথা রয়েছে যা চড়ক পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই পুজোয় কখনো জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাঁটা কিংবা ছুরি বা কাটার উপর দিয়ে লাফানো, শরীরে বাণ বিদ্ধ করে চড়ক গাছে ঝোলা ইত্যাদি এই পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত।
শ্রীকৃষ্ণ ও বাণ রাজার যুদ্ধের পর পরবর্তীকালে ১৪৮৫ সালে রাজা সুন্দরানন্দ ঠাকুর এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন বলে অনেকে মনে করে থাকেন। সেই সময় থেকেই মূলত শিবের ভক্ত অর্থাৎ শৈব সম্প্রদায়ের মানুষজন এই উৎসব পালন করে চলেছেন। মনে করা হয় প্রাচীন কৌম সমাজের প্রচলিত নরবলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই পুজোর রীতিনীতির। ব্রিটিশ সরকার এই পুজোর নিষ্ঠুর রীতিনীতির কারণে বন্ধ করে দিয়েছিলেন এই পুজো আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু আজও গ্রামবাংলায় নিয়ম নীতি অনুসারে পালিত হয় এই চড়কের পুজো।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.