|| ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১২ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
মীরসরাইয়ে গ্রামীণ জনপদে সৌরভ ছড়াচ্ছে ‘বনজুঁই
প্রকাশের তারিখঃ ১১ মার্চ, ২০২৫
বাচ্ছু পাটোয়ারী, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে:
অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা গ্রামবাংলার অতি পরিচিত গুল্মজাতীয় একটি বুনো উদ্ভিদ বনজুঁই। মীরসরাইয়ের পথে-প্রান্তরে, রাস্তার পাশে সুবাস ছড়াচ্ছে এই ফুল। ফুলগুলো সহজেই নজর কেড়ে নিচ্ছে স্থানীয়দের। ফুল দিনে ফোটে এবং রাতে সৌরভ ছড়ায়। এটি বনজ ফুল হলেও সৌন্দর্যের কমতি নেই। দেখে মনেই হবে না এটি অবহেলিত কোনো ফুল। অনেকের কাছে ‘বনজুঁই’ ভাটফুল, ভাটিফুল, ঘেটুফুল বা ঘণ্টাকর্ণ নামেও পরিচিত। দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো মীরসরাইয়ের আনাচে কানাচে সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে নজর কাড়ছে ফুলটি। শুভ্র সাদা ভাঁট ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় যেকোনো ফুলপ্রেমীর। এ ফুলের দিকে তাকালে অনেকের মন ভালো হয়ে যায় নিমিষেই।
মনের ভেতর একটা অন্যরকম অনুভূতি জাগে।
অঞ্চলভেদে এই গাছের ফুলকে বনজুঁই, ভাইটা ফুল, ভাটির ফুল, ঘেটু ফুল, ভাত ফুল, বলা হয়। চৈত্র মাসে এই ফুল ফোটে বলে একে চৈতের ফুলও বলেন কেউ কেউ।
বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতিকে সাজাতে সাদা বনজুঁই ফুলের শুভ্রতার জুড়ি নেই। বিশেষ করে পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে মিষ্টি ঘ্রানের, অজস্র ভাঁট ফুল ফোটা অবস্থায় চোখে পড়ে। প্রতিটি গাছে এক সঙ্গে অনেক ফুল ফুটে।
এর বৈজ্ঞানিক নাম, “ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম” ও ইংরেজি নাম “হিল গেন্টারি বোয়ার ফ্লাওয়ার”। বনজুঁই ফুলের আদি নিবাস ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার অঞ্চলে।
তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ফুল। আগে গ্রামের রাস্তার দুপাশে সচারাচর দেখা গেলেও এখন তা কমেছে। শহরে এ ফুল তেমন একটা চোখে পড়ে না। ফাল্গুন-চৈত্রে চোখ খোলা রাখলে, মন থেকে খুঁজলে সন্ধান মিলবে বনজুঁই। বনজুঁই গাছের প্রধান কাণ্ড সোজাভাবে দণ্ডায়মান, সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। দেখতে কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোঁটে। পাঁপড়ির রং সাদা এবং এতে বেগুনি রঙের মিশ্রণ আছে। বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম অবধি এ ফুল ফুটে। এই ফুলের রয়েছে মিষ্টি সৌরভ। রাতে বেশ সুঘ্রাণ ছড়ায় এই ফুল। মৌমাছিরা বনজুঁই ফুলের মধু সংগ্রহ করে থাকে।
ফারুকিয়া মদিনাতুল উলুম মাদরাসার শিক্ষিকা
জান্নাতুল ফারিহা জানান, আগে গ্রাম গঞ্জে অনেক বনজুঁই ফুল দেখতে পাওয়া যেতো। এখন আগের মতো সচারচার দেখা যায় না। অযত্নে প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠলেও সৌন্দর্যে কোনো কমতি নেই।
দেখতে যেমন সুন্দর তেমন এর ঘ্রাণটাও খুবই ভালো লাগে।
মীরসরাই পৌরসভা বাসিন্দা শেখ আহমেদ জানান, বনজুঁই ফুল দেখতে খুবই সুন্দর। গ্রামের মেঠো পথের দু'পাশে এখনো এ ফুল দেখা যায়। তবে আগের চেয়ে এখন কমই চোখে পড়ে। এই ফুল দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা ও করেন।
উপজেলা কৃষি কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, বনজুঁই একটি গুল্মজাতীয় দেশি বুনো পুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বুনো ফুল। গাঁয়ের মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অযত্নে ফোটে এই ফুল। ফুল গাছটি বনজুঁই বলে পরিচিত হলেও স্থানভেদে এবং ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীতে এর ভিন্ন ভিন্ন নামও রয়েছে। এ গাছের ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.