|| ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
ইঞ্জি. এ বি এম পলাশ শাহরাস্তি উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক হওয়ায় তার পিতাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়নি আওয়ামীলীগ সরকার
প্রকাশের তারিখঃ ৫ অক্টোবর, ২০২৪
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ইঞ্জি. এ বি এম পলাশের পিতা মোঃ নুরুল ইসলাম, ছেলের রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও বিগত সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি তিনি পান নি। মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণে রাজনৈতিক পদ ও পদবী বিবেচনার বিষয়টি সত্যিই মর্মান্তিক৷
দেশ স্বাধীনের মহান নেশায় মত্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভাতা প্রদান ও মূল্যায়ন করার বিষয়টি এখন উপজেলাসহ চাঁদপুর জেলা জুড়ে আলোচনায় তুঙ্গে।
এবিএম পলাশের রাজনীতির বলির পাঠা তার নিজের পরিবার আর তার বাবা! যিনি স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই আনসার বাহিনীতে ১৯৬৬-১৯৬৮ সালে ট্রেইনিং কোর্স সম্পূর্ন করেন, পরবর্তীতে ট্রেইনার হিসেবে ১৯৬৯ সালে কাজ করেন।
পরবর্তীতে তার বাবা নিজের পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা না করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন ঐতিহ্যবাহী হাতিমারা ক্যাম্প থেকে। বাবার নিকট তিনি সবসময় মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প শুনতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবার ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন কুমিল্লার আফজাল খান, শাহরাস্তির মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রুহুল আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমির হোসেন (অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ), ইউনিয়ন কমান্ডার মোঃ আবু তাহের।
সহকারী মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফাই করে দেওয়ার পর ২০০৪ সালে ছাত্রদলের শাহরাস্তি উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এবিএম পলাশের বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়, কিন্তু তৎ পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সকল কিছু বাতিল করে দেয়, আবার ২০১৭ সালে সকল প্রকার কাগজ পত্র জমা দিলেও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক কারণে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে পরাজিত হতে হয়।
বঞ্চিত করা হলো তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলামের প্রাপ্য অধিকার। একটা দেশের রাজনীতি কতটা নোংরা হলে একটা স্বাধীন দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা কতটা অসহায় হয়ে পড়ে। তার বাবার মৃত্যুর পূর্বে বয়সকালে চেহারা দেখে তিনি বুঝতে পারতেন, তার বাবার মনের অজানা কষ্ট!
মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলাম তার জীবনদশায় শুধু বলতো- কেন তুই (এবিএম পলাশ) ছাত্রদলের রাজনীতি করোস? তোর কারণে আজকে আমি সকল কিছু থেকে বঞ্চিত!
ছাত্রদল নেতা এবিএম পলাশের সাথে যোগাযোগ করলে আক্ষেপ করে বলেন ছাত্রদলের রাজনীতি করাটা এতোটা অপরাধ আর অভিশাপ হবে তা বুঝতে পারি নাই। নিজের চাকুরী থেকে শুরু করে সকল কিছু হারিয়েছি শুধু একটা সংগঠনকে ভালোবেসে। ভাতা বড় কথা নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মৃত্যুর পরেও তার বাবা পায়নি ওনার প্রাপ্য সম্মান,শুধু একটা কাগজের সার্টিফিকেটের কারণে।
কোন একটা কারনে সকল কাগজ পত্রগুলো আবার চোখের সামনে পড়লো, সারা রাত নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে আর বার বার বাবার কথা মনে হচ্ছে, চিৎকার করে কাঁদতে হলো অনেক। মনে হচ্ছে বাবা, বড্ড অপরাধী ছেলে আমি!! পরকালে কেয়ামতের দিন আমি আমার বাবার কাছে মহান আল্লাহর সামনে কি জবাব দেবো -?
এবিএম পলাশ আরো বলেন, যদি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতাম তাহলে বাবার সকল কিছু পান্তা ভাতের মতো সহজে হয়ে যেত। তখন সবার চেতনা জাগ্রত হতো, এই দেশ যাঁরা স্বাধীন করেছে এখনো তাদের সঠিক ভাবে মূল্যায়ন হয়নি। হয়েছে শুধু একটা গোষ্ঠীর, যাঁরা কখনো মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তাঁরা আজ বড় মুক্তিযোদ্ধা!! অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। আর আড়ালে রয়ে গেলো আমার বাবার মত এই রকম নাম না জানা অনেক হাজার হাজার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।
একটা মানুষের সকল প্রকার ডকুমেন্ট থাকার পর ও ওনি বঞ্চিত হয়েছেন কেন??এর জবাব কে দিবে??
তিনি তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা ও সনদ দিয়ে জাতিকে কলংক মুক্ত করার কথা বলেছেন। আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট বাতিল করে তাদের সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে এবং শাস্তির আওতায় আনারও জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষে তার বাবাসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা মৃত্যু বরন করেছেন তাদের রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
উক্ত বিষয়ে শাহরাস্তি উপজেলা বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন এবিএম পলাশের বাবা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমরাও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি উনাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করার জন্য কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষতিগুলো তার কাছে আমরা হেরে যাই। উক্ত বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো: আমির হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মোঃ নুরুল ইসলাম ভাই আমাদের সাথে একত্রে ট্রেনিং করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিন্তু উনার ছেলে ছাত্রদল করার কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলকভাবে ওনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
উক্ত বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মানবাধিকার নেতা, চাঁদপুর সিটি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের সিনিয়র প্রভাষক খন্দকার মোঃ শামসুল আলম সুজন জানান এবিএম পলাশ ও তার ভাই হাসান আমার ছাত্র হওয়ার সুবাদে এবিএম পলাশের বাবাকে আমি ভালোভাবে চিনি। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ওনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবিএম পলাশের পিতা মরহুম মো: নুরুল ইসলামের মরণোত্তর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.