|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
খুলনার দাকোপে নদী গর্ভে বিলীন হওয়া বাঁধটি আটকাতে সক্ষম হওয়ায় জনমণে স্বস্তি
প্রকাশের তারিখঃ ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান
অবশেষে পানিউন্নয়ন বোর্ডের নেতৃত্বধীন শ্রমিকরা
প্রয়োজনীয় বালু ভর্তি টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলে দাকোপের খোনা গ্রামে ঢাকী নদী গর্ভে বিলীন হওয়া
বেঁড়িবাঁধটি আটকাতে সক্ষম হওয়ায় স্হানীয় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
গ্রামের বসতঘর বাড়ির উঠানের ভিতরে ঢুকেপড়া পানি নেমে গেলেও অনেক স্থানে ডুবে থাকা রোপা আমন ফসলের ক্ষেত এখনো তলিয়ে রয়েছে। ভেসে গেছে দুই শতাধিক পুকুরের সাদা মাছ এবং ৪টি মৎস্য ঘেরের বাগদা চিংড়ি। সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি সম্পন্ন হয়েছে বলে ধারনা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
খোনা গ্রামের কৃষক চিত্তরঞ্জন বাইনের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা আর অন্যদের মত বাপদাদার পৈত্রিক সম্পত্তি বসতঘর বাড়ি, ফসলী জমি, স্থাপনা নদী গর্ভে হারিয়ে সর্ব শান্ত হতে চাই না। আমরা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান চাই না,আমরা অসহায় কৃষক আমাদের এক ফসলী জমির উপর আমন ধান বপন করে পরিবার পরিজনদেরকে নিচে বাঁচতে চাই। তাই আমরা উপজেলার পাউবো’র ৩১নং পোল্ডারের উপকূলীয় বাসীদের জানমাল রক্ষার্থে নদী শাসন পূর্বক যুগোপযোগী টেকসই বাঁধ নির্মাণ চাই। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন শুধু একা চিত্তরঞ্জন বাইনের নয়,তারমত করে এ নদী ভাঙ্গনের শিকারে নানা ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনাসহ টেকসই বাঁধের দাবী জানিয়েছেন কৃষক আব্দুল্লাহ ফকির, নজরুল ফকির, সত্য রঞ্জন বিশ^াস, রাসেল মোল্যা, খোকন মোল্যা, পরিতোষ মন্ডলসহ অনেকে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে গত ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার ১নং পানখালী ইউনিয়নের খোনা গ্রামে মোল্যা বাড়ির দক্ষিণ পাশে ঢাকী নদী গর্ভে বিলীন হয় পাউবো’র ৫০ মিটার বেঁড়িবাঁধ। বাঁধ ভাঙ্গার পর লোকালয় ঢুকে পড়া নদীর অথৈই পানি বিকালের ভাটায় তা নেমে গেলে পাউবো’র নেতৃত্বে শ্রমিকরা রাতভর বাঁধটি তাৎক্ষনিক আটকাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবষেষে বাঁধ ভাঙ্গার প্রায় ৩২ ঘন্টা পর গতকাল (৭ সেপ্টেম্বর) শনিবার সন্ধ্যায় পাউবো কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় মালামালসহ শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করে বাঁধটি আটকাতে সক্ষম হন।
পানখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ সাব্বির আহম্মেদ জানান,গত ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুর ১২টায় খোনা গ্রামে মোল্যা বাড়ির সামনে পাউবোর বেড়িবাঁধটি ঢাকী নদী গর্ভে বিলীন হয়। বাঁধটি বিলীন হওয়ার পর ঘটনার দিনই বিকালে ভাটায় পানি নেমে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক এবং স্থানীয় জনসাধারণের স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে বাঁধটি আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়েছে। আল্লাহর রহমতে বাঁধ ভাঙ্গার ৩২ ঘন্টা পর আজ ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় বিরোতিহীন কাজ করে অবশেষে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধটি আটকাতে সক্ষম হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কাদের বলেন, নদী গর্ভে বিলীন হওয়া বাঁধটি সরজমিনে পরিদর্শন পূর্বক ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেন খোনা গ্রামের বাঁধ ভেঙ্গে ৩টি গ্রামের ১৯৭টি পরিবার সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সহায়তা আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হবে। এ সময় এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলিয়ে শান্তনা দিয়েছেন থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোঃ সিরাজুল ইসলাম।
পাউবো’র উপ-বিভাগী প্রকৌশলী সুজয় কর্মকার বলেন, নদী গর্ভে বিলীন হওয়া খোনা গ্রামের বাঁধটি ঘটনার দিনই আটকানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধের পাশে গভীরতার কারণে ওইদিন বাঁধটি আটকানো সম্ভব হয়নি। তবে আজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেতৃত্বাধীন প্রয়োজনীয় শ্রমিকরা বালু ভর্তি ২৩ ফুট লম্বা ১২টিউব ব্যাগ এবং বালু ভর্তি ৫ হাজার জিও ও ছিনথেটিক ব্যগ ফেলে বাঁধটি আটকাতে সক্ষম হয়েছেন।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.