|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
কুলিয়ারচর প্রেসক্লাবে রহস্যজনক চুরি
প্রকাশের তারিখঃ ১৬ আগস্ট, ২০২৪
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর প্রেসক্লাবে তিনদিনের মধ্যে পরপর দুইবার রহস্যজনক চুরির ঘটনা ঘটেছে।
গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার পর ও গত ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতের যে কোন সময় দুইটি চুরির ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কে বা কাহারা কুলিয়ারচর বাজারস্থ প্রেসক্লাবের দুটি কেচি গেইটের তালা খুলে প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে ক্লাবের দুটি স্টিলের আলমারির তালা ভেঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে প্রেসক্লাবের দায়িত্বে থাকা ক্লাবের আহ্বায়ক সদস্য সাংবাদিক মো. নাঈমুজ্জামান নাঈম বলেন, ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে স্থানীয় সাংবাদিক আলি হায়দার শাহিনের সাথে আলাপ আলোচনা শেষে তিনি কুলিয়ারচর বাজার থেকে বাড়ি যান। বাড়ি থেকে পূনরায় প্রেসক্লাবের সামনে এসে তিনি দেখতে পান প্রেসক্লাবের তালা খোলা এবং অফিস কক্ষের দুটি আলমারি ভেঙ্গে কাগজপত্র তছনছ করেছে। এ সময় কি কাগজপত্র নিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। তবে প্রেসক্লাবের তালার চাবি তার নিকটই ছিলো। তালার গায়ে কয়েকটি বারির চিহ্ন ছিলো। পরে তিনি প্রেসক্লাবের ওই দুটি তালা লাগিয়ে আবার বাড়ি চলে যান। রাত ১০টার পর প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম ও সাংবাদিক আলি হায়দার শাহিনকে চুরির ঘটনা অবহিত করেন নাঈম।
সাংবাদিক আলি হায়দার শাহিন জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক নাঈমুজ্জামান নাঈম তার সাথে আলাপ আলোচনা শেষে কুলিয়ারচর বাজার থেকে বাসায় যান। এরপর নাঈমুজ্জামান নাঈম তার বাসা থেকে কি কারণে প্রেসক্লাবে এসেছিল তা তিনি অবগত নন। রাত ১০টার পর তাকে চুরির ঘটনাটি অবহিত করেন নাঈম।এরপর গত ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ হলরুমে প্রেসক্লাবের আহবায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলমের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভায় পূর্বের গঠনতন্ত্র অবৈধ ঘোষণা করে সাংবাদিক এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলমকে আহবায়ক করে পূনরায় একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপরই ওইদিন বৃহস্পতিবার রাতে একই কৌশলে পূনরায় প্রেসক্লাবের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও জিনিসপত্র চুরি হয়। এ চুরির সময়ও প্রেসক্লাবের তালা লাগানো ও তালা অক্ষত ছিলো। এসব তালার চাবি সাংবাদিক নাঈমুজ্জামান নাঈম এর হাতেই ছিলো।
এ দুটি চুরির ব্যাপারে সাংবাদিক আহমেদ ফারুক, সাংবাদিক আলি হায়দার শাহিন, সাংবাদিক শরীফুন নেছা শুভ্রা, সাংবাদিক শাহীন সুলতানা, সাংবাদিক মো. লোকমান হোসাইন ও সাংবাদিক মো. আলী সোহেল বলেন, গত ৯ আগস্ট শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন ও প্রেসক্লাবে বসার বিষয় নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম এর সাথে সাংবাদিক নাঈমুজ্জামান নাঈম ও সাংবাদিক ফারজানা আক্তার তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে ফারজানা আক্তার হুমকি দিয়ে বলেন, প্রেসক্লাবের সকল কাগজপত্র পুড়িয়ে ছাঁই করে দিবে এবং নাঈমুজ্জামান নাঈম বলেন, তার গ্রুপের বাইরের সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে কি ভাবে প্রবেশ করে তা দেখে নিবে। প্রেসক্লাব নিয়ে যে কথা বলবে তাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হবে। এ ঘটনার ৪ দিন ও ৬ দিন পর এদুটি রহস্যজনক চুরির ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে সাংবাদিক নাঈমুজ্জামান নাঈম ও সাংবাদিক ফারজানা আক্তার নিজে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে এসব চুরির ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। কেননা চুরির সময় তালার গায়ে কয়েকটি হালকা আঘাতের চিহ্ন থাকলেও তালা দুটি অক্ষত ছিলো। কোথাও ভাঙ্গার আলামত দেখা যায়নি। চাবি ছাড়া এসব তালা কি ভাবে খুলা হয়েছে এ নিয়ে সন্দেহ আছে।
সংবাদ পেয়ে বুধবার ও শুক্রবার কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সারোয়ার জাহান ও স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
প্রথম চুরির ঘটনায় থানায় কোন সাধারণ ডায়েরি না করলেও দ্বিতীয় চুরির ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মো. মাহাবুবুর রহমান।
উল্লেখ্য, এর আগেও প্রেসক্লাবে কমিটি গঠন নিয়ে সাংবাদিকদের মাঝে আলোচনা হলে গত ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ১৩ আগস্ট রোববার বিকাল ৪ ঘটিকার মধ্যে তালা লাগানো প্রেসক্লাবে চুরি হয়। প্রেসক্লাবের কোথাও কোন ভাংচুর কিংবা তালা ভাঙ্গা ছিলোনা। চোর কি ভাবে ভিতরে প্রবেশ করলো তার রহস্য পুলিশ প্রশাসন সহ এপর্যন্ত কেই উদঘাটন করতে পারেনি। কারন, প্রেসক্লাবের চাবি ছিলো প্রেসক্লাবের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিক মো. রফিক উদ্দিন, সাংবাদিক মো. রফিকুল বাহার, সাংবাদিক মো. জাহিদুল ইসলাম সোহাগ ও সাংবাদিক নাঈমুজ্জামান নাঈম এর হাতে। ওই চুরির ঘটনাও রহস্যজনকই ছিলো। এর আগেও প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা হলে প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র চুরি হয়।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.