|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কাজ সমাধান করতে হবে : ফখরুল
প্রকাশের তারিখঃ ৬ আগস্ট, ২০২৪
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আজ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) গঠন করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় সরকার গঠনের কাজ সমাধান করতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কাল বিলম্ব না করে আপনি আজকের মধ্যে দয়া করে অবিলম্বে এই সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন।
অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে চান, আপনারা সমর্থন করেনে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার না। যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামের জন্য, আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব। এখানে এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট।
উনি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রধান, তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেওয়ার জন্য। সুতরাং যখন রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে ডাকবেন তখনই আমাদের যেটা নামের প্রস্তাব আমরা দেব। তবে একটা কথা বলে দেই, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাদের সাথে একাত্মবোধ করছি।
এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আপনারা কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নাম অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থির করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ‘না’ সূচক জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আজকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রত্যাশায় এবং একই সঙ্গে আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপনারা এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্যে আপনারা কাজ করেছেন। দুঃখপ্রকাশ করছি এই বিজয়ের পরে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী কয়েকটি টিভি সেন্টারে অগ্নি সংযোগ করেছে, ভাঙচুর করেছে।
এটা মুক্ত স্বাধীনতা ও স্বাধীন গণমাধ্যম তার বিরুদ্ধে। আমরা সবসময় ফ্রিডম অব প্রেসে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি ব্যক্তি, মানুষ, সংগঠন বিশেষ করে সাংবাদিকরা যাতে তাদের মত একদম স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। সেই বিশ্বাসে আমরা মনে করি যে, যারা এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকেছেন তারা এসব থেকে বিরত থাকবেন এবং সংবাদপত্রের যে মুক্ত ধারা তা অব্যাহত রাখবেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাতে চাই যে সমস্ত শহীদদের যারা ছাত্র ও জনতা যারা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম সেই সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা অভিনন্দন জানাতে চাই, স্যালুট জানাতে চাই, আমাদের ছাত্রদের আমাদের সন্তানদের যারা তাদের মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সাহস নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বুকে রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা বিজয় অর্জন করেছেন আমরা তাদের স্যালুট জানাই। আমরা সকল রাজনৈতিক দল, সকল ব্যক্তি, পেশাজীবী যারা এই সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আছেন তাদের সকলকে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই বিজয় অর্জন করার জন্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই বিজয় অর্জন করা হয়েছে। কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে, প্রতিটি স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের স্বাধীনতাকে সুসংহত করা। সেই স্বাধীনতা তখনই সুসংহত হবে যখন আমরা প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে পারব। আর সেজন্য আজকে প্রয়োজন ধৈর্য, সংযম এবং পরমতসহিষ্ণুতার জন্য নিজেকে তৈরি করা। আপনাদের কাছে অনুরোধ করব আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছিয়ে দিতে চাই, যে এখন এরোগেন্টস, রেজিয়েন্স এটা কোনো স্থান নেই। স্থান নেই কোনো প্রতিহিংসা, কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের। এখন যেটা প্রয়োজন ধৈর্যের সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করা।’
এখনো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়ি-ঘরে হামলা করছেন- দয়া করে এটা এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করুন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যারা এটা করছেন তারা কেউ আন্দোলনের লোক নয়, তারা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে তাদের লোকেরা এসব করছে। এ বিষয়গুলো সবার মনে রাখতে হবে। আমি আপনাদের মাধ্যমে সারা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আমার দলের নেতা-কর্মীদেরকে অনুরোধ করব, তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে একটা ঠাণ্ডা অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা করতে হবে।’
আমরা রাহুমুক্ত হয়েছি, আমরা ফ্যাসিবাদের যে মূল হোতা জনগণ তাকে সরিয়েছে, সে পালিয়েছে, তাকে বিতাড়িত করেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘সেখানে এই বিজয় নিঃসন্দেহে বড় বিজয় সেই বিজয়টাকে কনসোলেটেড করতে হবে। রাষ্ট্রপতি অঙ্গীকার করেছেন যে, যেহেতু শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছে সেহেতু শেখ হাসিনার কেবিনেট পুরোপুরিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই সংসদ বিনাভোটের সংসদ এর কোনো কার্যকারিতা নেই। সেজন্য এটাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে দিতে হবে। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন বলেন, নিরপেক্ষ সরকার বলেন তা গঠন করা হবে তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। ম্যাডাম সবাইকে প্রথম যে বলেছেন, সবাই শান্ত হতে বলো। এখানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয় যাতে অর্জিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যায় কেউ।’
খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসমক্ষে আসবেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন, ম্য্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি গতকাল রাতে দেখা করেছি। সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।’
জানিয়েছেন বামপন্থি নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে তারা অবিলম্বে আন্দোলনকারী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ও সকল ছাত্র সংগঠন এবং সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদ আয়োজতি সমাবেশে এই দাবি জানান তারা। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার বেলাল চৌধুরী প্রমূখ।
সমাবেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয়, ‘গণবিক্ষোভে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পলায়ন ছাত্র জনতার বিজয়। এই বিজয়কে স্থায়ী করতে হলে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান করে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।’
সমাবেশে দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেতন দেশবাসীকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, এই সুযোগে বিভিন্ন জায়গায়, দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীরা বিভিন্ন অফিসে তাদের দুর্নীতির ফাইল পোড়ানোর উৎসব করতে পারে। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন থেকে দুর্বৃত্তদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘শত শত শহীদের রক্তদান ও দীর্ঘ লড়াই ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই। ফ্যাসিবাদী শাসকের পতনের বিজয় ধরে রাখতে সচেতন দেশবাসীকে পাহারাদারের ভূমিকা নিতে হবে।’
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.