|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
ঠাকুরগাঁওয়ে অন্য উপজেলা থেকে আত্মীয়-স্বজনদের টাকা আত্মসাৎ,কর্মকর্তা বিরুদ্ধে অভিযোগ
প্রকাশের তারিখঃ ৩০ জুন, ২০২৪
চলতি মৌসুমে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ শীর্ষ প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে উপজেলা ভিত্তিক ৩০০ জন চাষিকে ৩ লক্ষ টাকা সম্মানীতে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নিজের স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক পাট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অন্য উপজেলা থেকে ভ্যান ভাড়া করে শ্বশুর, দেবর, চাচাতো ভাইসহ আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানিয়ে ভাতার টাকা তিনি আত্মসাত করছেন বলে জানা গেছে।
আর এ ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আক্তারের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে উপজেলা পরিষদ হলরুমে
এ ঘটনা। আগামী ৩০ জুন বরাদ্দকৃত প্রকল্পেটির মেয়াদ শেষ হবে ভেবে তিনি তাড়াহুড়ো করে এ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছিলেন। জানা গেছে,
এ প্রকল্পের আওতায় ওইদিন উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী ১৫০ জন পাটচাষি কৃষককে নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পাট অধিদপ্তর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ঠাকুরগাঁও। ১৫০ জনের প্রশিক্ষণ হলেও উপস্থিত ছিলেন ৯২ জন চাষি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ জন পার্শ্ববতী পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলার বাসিন্দা। কিন্তু প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থীদের নিজ উপজেলার বাসিন্দা ও প্রকৃত কৃষক হতে হবে। খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে চাষিদের পরিচয় জানার চেষ্টা করলে প্রশিক্ষণ ছেড়ে ভ্যানে চড়ে চলে যায় প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া অন্য উপজেলা থেকে আগত চাষিরা। ফাঁকা হয়ে যায় উপজেলা পরিষদ হলরুম। পরে বিষয়টি অবগত করা হয় উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তাকে। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে এসে এসব অনিয়মের সত্যতা পায় উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, আমার নির্বাচনী এলাকার পরিচয় দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিল পার্শ্ববর্তী পীরগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন চাষি। খবর পেয়ে এসে দেখি সবাই অপরিচিত। জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার তাদের ভ্যান ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। সবাই কর্মকর্তার আত্মীয়-স্বজন। এনমি উনার শ্বশুরও ছিলেন। তারা আমাকে দেখে দ্রুত চলে যায়। পাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বী রুবেল জানান, আমাকে ফোন দিয়ে পাট কর্মকর্তা ২ জন চাষিকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠাতে বলেছিল। ১৫০ জন প্রশিক্ষর্ণাথী হলে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে কমপক্ষে ১৫ জনের সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু শুনেছি আমার ওই দু’জন চাষি ফেরত এসেছে, প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেনি, সম্মানীও পায়নি। এদিন বিকেল ৪টার পর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একপাশে বসে আছেন পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার। অন্যপাশে ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার মালাকার। মাস্টাররোল দেখে চাষিদের ৫০০ টাকা সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। কয়েক জনকে দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় সম্মানী দেওয়া।আত্মীয়-স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বালিয়াডাঙ্গী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ঝরনা আকতার সাংবাদিকদের জানান, তারা কিভাবে এসেছেন তা তিনি জানেন না।
এ কথা বলেই তিনি সেখান থেকে উঠে চলে যান। ঠাকুরগাঁও জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার মালাকারের কাছে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, অন্য উপজেলা থেকে চাষি এনে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছিলেন এমন সত্যতা তিনি পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন,এ বিষয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার সঙ্গে বলে উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করা হবে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. আফছানা কাওছার জানান, অন্য উপজেলা থেকে আত্মীয় স্বজনদের এনে প্রশিক্ষণার্থী বানানোর ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এ অনিয়মের শাস্তি হিসেবে পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হবে।
প্রসঙ্গত: পাট অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে পাটবীজের চাহিদা পূরণ করতে ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প নেয় সরকার। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৮ থেকে মার্চ ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। পরে সংশোধিত হয়ে মেয়াদ বাড়ায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের চলতি অর্থবছরে পাটচাষি প্রশিক্ষণের কার্যক্রম প্রকল্পভুক্ত পাট উৎপাদনকারী ৪৫টি জেলার ২২৮টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ শুরু করার জন্য ২১ এপ্রিল চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয় অধিদপ্তর।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.