|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
পাঁচবিবিতে কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে ব্যাস্ত সময় পার করছে কামার কারিগররা
প্রকাশের তারিখঃ ১৩ জুন, ২০২৪
মুসলমানদের ধর্মের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। এই কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে টুং-টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামার পল্লীগুলো। বেড়ে গেছে কারিগরদের ব্যস্ততা।
এরই ধারাবাহিকতায় হাতুড়ি পেটা শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে এ উপজেলার কামার পল্লী। সারাদিন তপ্ত ইস্পাত গলিয়ে চলছে পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটিসহ নানাবিধ সরঞ্জাম তৈরির কাজ। দম ফেলারও সময় নেই শিল্পীদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, এ উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের কেউ ভারি হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন আগুন রাঙ্গানো লোহার খণ্ড। কেউ পুরনো দা-ছুরিতে শাণ দিচ্ছেন। কেউবা হাপর টানছেন। কেউ আবার কয়লার আগুনে বাতাস দিচ্ছেন। বাগজানা রেল স্টেশন সংলগ্ন শুব্রত কামারের দোকান ঘুরে দেখা যায় দা, ছুরি, চাকু ও বঁটির বেচাকেনা বেড়েছে। দামও সন্তোষজনক। এ উপজেলার কামারপাড়ার কারিগররা অভিযোগ করেন, “তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারাদিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়।”
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সারা দেশেই কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। কয়েকজন ক্রেতা জানান, “কোরবানি ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলছেন। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, বঁটির দাম একটু বেশি বলে জানান তারা। পাঁচবিবি লঙ্গলহাটি এলাকার কামাররা জানান, “কোরবানী ঈদ এলে লোহার দাম না বাড়লেও কয়লার দাম বেড়ে যায়। ফলে তাদের ব্যবসা চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়। কামার শিল্পীদের দাবি, সরকার যেন এ শিল্পে ভর্তুকি দিয়ে তাদের বেঁচে থাকার একটা সুব্যবস্থা করে দেয়।
কামার একটি প্রাচীন পেশা যার কাজ লোহার জিনিসপত্র তৈরি করা। পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করেন। অতি প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায় গ্রামাঞ্চলে কামার পেশায় জড়িত।”
কৃষিকাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গভূমিতে কামার পেশার উৎপত্তি ঘটে। হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায়ের মধ্যে লোহার কারিগর তথা কর্মকার শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। প্রচলিত লোককাহিনী মতে কোনো এক শূদ্র মহিলার সঙ্গে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার প্রণয় থেকে কর্মকার বা কামারের জন্ম হয়।
বছরের অন্যান্য দিন গুলোতে তেমন কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হলেও কোরবানির ঈদের সময়টাতে তাদের কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ সময়টাতে তাই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হয় তাদের। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছরের খোরাক জোগাড় করেন।
পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা বাজারের ব্যবসায়ী দিপক চন্দ্র বলেন, “বর্তমানে প্রকারভেদে প্রতিটি জিনিসের মজুরি নেওয়া হচ্ছে। ৭০০টাকা কেজি দরে দা-কুড়াল, হাসুয়া-বটি ২৫০-৩০০ টাকা ও ছুড়ি ১৬০-১৫০ দা২০০-৪০০ টাকা , বড় ছুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত । সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দা, বটি, ছোরা, চাকুর পাশাপাশি মাংস বানানোর কাজের জন্য গাছের গুঁড়ির চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক।
পাঁচবিবির বাগজানা বাসস্ট্যান্ড এলাকার কৃষ্ণ কর্মকারের পুত্র বলেন, বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প। একসময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমান আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছ যার ফলে, আমাদের তৈরী যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হারাচ্ছে। হয়তোবা এক সময় এ পেশা আর থাকবে না। তবে কোরবানির ঈদের সময় কিছুটা ব্যবসা হয়।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.