|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
পাঁচবিবির বাগজানায় তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন আফাজ ইসলাম
প্রকাশের তারিখঃ ৩১ মে, ২০২৪
আফাজ ইসলাম (৫০) বাড়ি পাঁচবিবির বাগজানা ইউনিয়নের রেল লাইনের পশ্চিম পার্শ্বে। ছোটবেলা থেকেই তালের শাঁস বিক্রি করে আসছে সে। বাগজানা বাজারে সবার পরিচিত মুখ ।
সময়টা তালের শাঁস এর মৌসুম হওয়ায় এখন তাকে দেখা যায় বাগজানা বাজারে একটি দা হাতে । তার সাথে কথা বললে তিনি জানান এবছর গরম বেশি হওয়ায় ব্যবসাও অনেকটা বেড়ে গেছে, তালের শাঁস এর প্রধান ক্রেতা স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তবে দুর দুরান্ত থেকে বাগজানা বাজারে আগত ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মাঝেও বিক্রী করছেন তালের শাঁস। সাড়া দিনে তিনি বিক্রি করেন ১৫০০-২০০০ পিস তালেন শাস।
সরেজমিনে বাগজানা বাজার এলাকার রাস্তা, ফুটপাতে ও বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, কচি তালের শাস বিক্রি। পাইকারির পাশাপাশি বিক্রি চলছে খুচরাও। এসব স্থানে তালের শাঁস কিনে খাচ্ছেন খুচরা ক্রেতারা। আর এই তালেন শাঁস এর জন্য আফাজ ইসলাম, কাঁচা তাল সংগ্রহ করেন পাঁচবিবি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। ৩-৪ টি বাধা বিশিষ্ট প্রতিটি গাছ ১০০০-১২০০ টাকার ক্রয় করেন তিনি। এবং প্রতিটি কাঁচা তাল থেকে ২-৩ টি করে শাঁস পাওয়া যায়। তিনি প্রতি হালি বিক্রি করেন ২০ টাকা করে। এতে সাড়া দিনে ১৫০০-২০০০ পিস তালের শাঁস বিক্রি করে তার সংসার চলে বলে জানায়।
জৈষ্ঠ্য মাস মধু মাস। যেহেতু এটি মৌসুমী ফল, তাই তালের মৌসুম শেষ হলে তিনি ডাব বিক্রি শুরু করেন। এভাবেই তার জিবীকা নির্বাহ করেন। তবে প্রতিনিয়ত গ্রাম থেকে তালের গাছ কেটে ফেলায় দেখা দিয়েছে কাঁচা তালের সংকট। দামও বেড়ে গেছে কাঁচা তালের। এর ফলে আফাজ ইসলামের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া দূরহ হয়ে পড়েছে। আবার অনেক তাল গাছ মালিক কাঁচা অবস্থায় তাল বিক্রি না করে ভাদ্র মাসে পাকা তাল বিক্রির জন্য রেখে দেন। তাতেও কাঁচা তালের সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে এতো প্রতিকূলতার মাঝেও অতি কষ্টে চালিয়ে যাচ্ছেন তার তালের শাঁস বিক্রি। এবং জীবনের বাঁকিটা সময় এই পেশার সাথেই থাকতে চান তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচণ্ড গরমে তালের কচি শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি। তালের শাঁসে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৮ গ্রাম খাদ্যপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম আঁশ রয়েছে। গরমে শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে এর মধ্যে আছে ৭৭.৫ ভাগ জলীয় অংশ। ০.৫ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। তালের শাঁসে খাদ্যশক্তি রয়েছে প্রায় ৮৭ কিলো ক্যালোরি। ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে। কচি তালের শাস রক্তশূন্যতা দুর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।
আফাজ ইসলাম আরো বলেন, বাণিজ্যিকভাবে পাঁচবিবি অঞ্চলে তাল গাছের তেমন বাগান নেই। তবে পাঁচবিবি উপজেলার আশপাশে সড়কের পাশে বেশ তালগাছ আছে। সাধারণত বাসাবাড়িতেই মানুষ তালগাছ রোপন করে থাকে। তালগাছ বজ্রপাত রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ইদানিং নির্বিচারে তালের গাছ কেটে ফেলায় বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু অনেক বেড়ে গেছে। তাই অধিক হারে বাড়ির আশেপাশে ও ফাকা জায়গায় তালের গাছ রোপনের দাবি আফাজ ইসলামের।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.