|| ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
সুন্দরবনজুড়ে রিমালের ক্ষত
প্রকাশের তারিখঃ ১ মে, ২০২৪
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের ক্ষতচিহ্ন এখন সুন্দরবনজুড়ে। গাছপালার ক্ষতি তেমন না হলেও বন্যপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯৬টি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কটকা ও কচিখালীতে ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। মিষ্টি পানির আধারে লবণ পানি ঢুকে পড়ায়, সেগুলো বৃষ্টির পানি দিয়ে আবারো ভরাট করতে হবে। এছাড়া অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন বিভাগের। সুন্দরবনের এই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে লেগে যাবে দীর্ঘ সময়।
কটকা অভয়ারণ্যের জামতলা পয়েন্টে পা রাখলেই স্পষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব। কিছুদূর এগোলেই চোখে পড়ে মৃত হরিণ। এখানেই পাওয়া গেছে ৩৮টি হরিণের নিষ্প্রাণ দেহ।
একই অবস্থা কচিখালীতে। এখানে এবং পাশের সুপতি খাল থেকে অন্তত ১০টি হরিণের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে । উদ্ধার হয়েছে দুটি শুকরের মৃতদেহও । আর এগুলো বনেই রাখা হয়েছে অন্যান্য প্রাণীর খাবার হিসাবে।
কটকা অভয়ারণ্যের ইনচার্জ সুরজিত চৌধুরী বলেন, ‘মরদেহগুলো যে স্থানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই রাখা হচ্ছে। কারণ ইকো সিস্টেমে শুকর, গুঁইসাপ বা অন্যান্য প্রাণিরাই এগুলো খেয়ে ফেলবে। এটা প্রকৃতির নিয়মেই মিশে যাবে।’
উপকূলে বৈরী আবহাওয়ায় ঢাল হয়ে থাকা সুন্দরবনে আছে ১২০টি মিঠা পানির পুকুর। এর মধ্যে ১০০টি লবণ পানিতে ডুবে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন বনজীবী-বনকর্মী ও বন্যপ্রাণি। পুকুরগুলোর লবণ পানি তুলে বৃষ্টির পানি দিয়ে ভরাটের অপেক্ষায় বন বিভাগ।
চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেব বলেন, ‘দুইটা পুকুর আছে, সেখানে একটা পুকুর রেখে বাকিটা পরিস্কার করার জন্য বলা হয়েছে। মানে লবনাক্ত পানিটা সরিয়ে ফেলে প্রাকৃতিক ভাবে বৃষ্টি হলে যেন সেটা আবার ভরে যায়।’
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বনের বিভিন্ন ক্যাম্প ও স্টেশনের জেটি ভবন। প্রাথমিকভাবে ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির ধারণা করছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, ৩১ মে পর্যন্ত এ ১১৫টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসের বানের সঙ্গে ভেসে যাওয়া ১৮টি হরিণ এবং একটি অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সেগুলোকে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার মৃত বন্যপ্রাণীগুলো মূলত কটকা, কচিখালী, নীলকমল, আলোরকোল, ডিমের চর, পক্ষীরচর, জ্ঞান পাড়া, শেলার চর থেকে পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দফায় দফায় উচ্চ জোয়ারে সুন্দরবনের সব নদী-খাল উপচে বনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এই জোয়ারের উচ্চতা ছিল ১০ থেকে ১২ ফুট। জলোচ্ছ্বাসের ফলে সৃষ্ট জোয়ারের পানি সুন্দরবনের গহিনে বিস্তৃত হয়। এর ফলে হরিণগুলো ভেসে ওঠে, কিন্তু সাঁতরে কূলে উঠতে পারেনি। এ কারণে সেগুলো মারা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
বন বিভাগের অবকাঠামোগত প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৬.২৭ কোটি টাকা বলে জানান বন সংরক্ষক।
‘গাছের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। খুব সীমিত ক্ষতি হয়েছে। তবে বন্যপ্রাণীর বেশ ক্ষতি হয়েছে। যেহতু দীর্ঘসময় জলোচ্ছ্বাসটা ছিল এবং পানির উচ্চতা অনেক জায়গায় ১০ ফিট বা ১২ ফিটের মতো ছিল।’
সমুদ্র লাগোয়া স্থানগুলো ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায়, এসব এলাকায় ক্ষতি বেশি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের মত সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর এত ক্ষতি আগে হয়নি কখনও।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.