|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
সীতাকুণ্ডে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে পেটানোর অভিযোগ টিআই আশরাফ এর বিরুদ্ধে
প্রকাশের তারিখঃ ১৪ মার্চ, ২০২৪
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড মডেল থানার সামনে প্রকাশ্যে মোঃ সরোয়ার উদ্দিন প্রকাশ মানিক (৩৩) নামের এক সিএনজি ড্রাইভারকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মোঃ আশরাফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে সীতাকুণ্ড মডেল থানার সামনে এই ঘটনা ঘটে। ভিকটিম মোঃ সরোয়ার উদ্দিন প্রকাশ মানিক উপজেলার ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড শেখের হাট ভূঁইয়া বাড়ীর মৃত বীরমুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলমের পুত্র। দুপুর ২টার দিকে সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার সময় থানার সামনে গাড়ী আটকিয়ে আশরাফ স্যার জিজ্ঞাস করে এটা কার গাড়ী? ভাড়ায় চালিত, হিজড়ার গাড়ী বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে একের পর এক থাপ্পর মারতে থাকে। আমার অপরাধের কথা জানতে চাইলে, আবারো থাপ্পর মারে। আমার অপরাধ কি স্যার? মারছেন কেন? এরপরও থাপ্পর মারতে মারতে বলেন, এটা তোর গাড়ী, তোর লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ী চালাস কেন? তোকে যেন আর সীতাকুণ্ডে না দেখি। স্যার আমার অপরাধ থাকলে মামলা দিন কিন্তু এভাবে আমাকে মারছেন কেন? রোজা মুখে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই সীতাকুণ্ড বাজারে জনসম্মুখে ঘটনার বর্ণনা দিতে থাকেন সিএনজি ড্রাইভার মোঃ সরোয়ার উদ্দিন প্রকাশ মানিক। তিনি আরো বলেন, আমি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দীর্ঘদিন যাবত গাড়ী চালিয়ে সংসার চালায়। আমার বাড়ী সৈয়দপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট। সীতাকুণ্ড বাজারস্থ এবি ব্যাংকের নিচ থেকে শেখেরহাট বাজারের মোট ১৫টি গাড়ী পুলিশকে মাসিক ৫শ টাকা চাঁদা দিয়ে চলে। না দিলে গাড়ী বন্ধ থাকে, শুরু হয় ধরপাকড় ও মামলা। তবে আমি ঐ লাইন কমিটির সদস্য ও বীরমুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়াতে আমাকে চাঁদা দিতে হয়না। তৎকালীন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আল-আমিন স্যার থাকা অবস্থায় থানা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আলিম উল্ল্যার অনুরোধে আমার চাঁদা দেওয়া লাগতো না। বাকিরা সবাই চাঁদা দেয় শুধু আমি ছাড়া। প্রায় সময় আমি বাজারে আসলে টিআই আশরাফ গালিগালাজ ও বিভিন্ন রকম হয়রানি করতো। সীতাকুণ্ডে প্রতিটি সিএনজি থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করা হয়। আমি না দেওয়াতে হয়তো আমার সাথে এমনটা ঘটেছে।
তবে সিএনজি ড্রাইভারের অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আশরাফ উদ্দিন বলেন, রমজানের সময় ডাবল লাইনে গাড়ী চালানোর সময় আমি তাকে ধমক দিয়েছি। পরবর্তীতে আবার তার মাকে নিয়ে এসে ঝাঁমেলা করতে থাকে। সে একটি উশৃঙ্খল প্রকৃতির লোক আপনি খবর নিয়ে দেখেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সম্যসা নাই। রমজানে গাড়ীর জ্যাম হলে মানুষ আমাদের বিরক্ত করে। তাই শৃঙ্খলা ফেরাতে আমি তাকে ধাক্কা দিয়েছি।
সন্তানের উপর মারধরের কথা শুনে সীতাকুণ্ড বাজারে ছুঁটে আসেন মৃত বীরমুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সামছুন্ননাহার। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র পুত্রের কথা শুনে রাস্তায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলে সারাদিন রোজা রেখে সিএনজি চালায়। তারা আমার ছেলেকে মারধর করেছে, আমি এর বিচার চাই। আমার ছেলের কোন দোষ থাকলে তার বিচার হবে। কিন্ত গায়ে হাত কেন দিবে?
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সিএনজি ড্রাইভারের অভিযোগ বিভিন্ন সময় এইভাবে সাধারণ সিএনজি অটোরিক্সা ড্রাইভারদের হয়রানি সহ মারধর করেন ট্রাফিক পুলিশ। সিএনজি ড্রাইভার সরোয়ার উদ্দিন তাঁর মাকে নিয়ে এসে প্রতিবাদ করলে ভয়ে টিআই আশরাফ স্যার ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। অপর দুই ট্রাফিক সদস্যও বাকবিতণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। রাস্তায় উদ্ভটকাণ্ড সৃষ্টি হলে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে যায়। জনতার প্রতিবাদের ভয়ে অপর ট্রাফিক সদস্য শাহিন ও আনিস নিজেকে আঁড়াল করে নেয়। আমাদের থেকে মাসে মাসে টাকাও নেয় আবার ইচ্ছা হলে গাড়ী ধরে মামলা দেয়। তখন বলে উপরের নির্দেশ কিছু করার নাই। কিছু হলেই সিএনজি অবৈধের অজুহাত দেয়। অবৈধ যদি হয় মাসিক চাঁদা নেওয়া হয় কেন? একেবারে বন্ধ করে দিলে তো হয়। পুলিশ চাইলে একদিনে বন্ধ করে দিতে পারে কিন্তু তা করবে না।
খোব প্রকাশ করে, সীতাকুণ্ড থানা অটো-টেম্পু চালক ও সহকারী ইউনিয়নের যার (রেজিঃ নং ১৬৩৩/৯২) সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, সরোয়ার উদ্দিন মানিকের বিষয়টি আমি দুপুরে জানতে পেরেছি। এটি খুবি দুঃখজনক। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সীতাকুণ্ডে চালক-হেলপারা অসহায়, তাদের পক্ষে কথাবলার কোন মানুষ নেই। ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মোঃ আশরাফ উদ্দিন যে কাজটি করেছে এটি অসৌজন্য ও নিন্দনীয়। ঘটনা তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এন.এম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, এ বিষয়ে একটি নোটিশ আমার নজরে এসেছে। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.