|| ১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৭ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
পাঁচবিবি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে নিয়ম গোপন করে বোরো চাষে গভীর নলকুপের পানি বিক্রি
প্রকাশের তারিখঃ ১ মার্চ, ২০২৪
কৃষক ও কৃষি কাজের সুবিধার্থে অল্প খরচে জমিতে পানি সেচের জন্য সরকারি ব্যয়ে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অধীনে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ৮১টি বরেন্দ্র গভীর নলকূপ। এর মধ্যে দুটি বরেন্দ্র গভীর নলকূপ বন্ধ আছে। এসব সকল গভীর নলকূপ থেকে কৃষকদের পানি সরবরাহের জন্য “ কাজ নাই মজুরী নাই” ভিত্তিতে একজন করে অপারেটর নিয়োগ হয়। যারা প্রতি ঘন্টায় ১০ টাকা হারে কমিশন পান। কিন্তুু প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপন করা বেশিরভাগ বরেন্দ্র গভীর নলকূপের অপারেটরদের বিরুদ্ধে ইরি বোরো মৌসুমে পানি সেচ দিতে কয়েকগুণ বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বরেন্দ্র গভীর নলকূপ থেকে একজন কৃষক রিচার্জ কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি বরেন্দ্র গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানি নেওয়ার কথা থাকলেও সে সুবিধা পাচ্ছেন না কৃষকেরা। এতে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিতের পাশাপাশি ইরি বোরো মৌসুমে দ্বিগুন দামে বরেন্দ্র গভীর নলকূপ থেকে পানি কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কৃষকের পকেট কাটছে বরেন্দ্র গভীর নলকূপের দায়িত্বে থাকা এসব অপারেটররা। যদিও উপজেলা বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের ডুগুরপাড়া গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে সাজা মিয়া। তিনি পাগলা বাজার এলাকার একটি বরেন্দ্র গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্বে আছেন। তিনি কৃষককে রিচার্জ কার্ডের পরিবর্তে প্রতি বিঘা জমি ২ হাজার টাকায় পানি সেচ দিচ্ছেন। তার পাশে অপর আরো একটি বরেন্দ্র গভীর নলকূপের অপারটরের দায়িত্বে আছেন শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি। তার বিরুদ্ধেও কৃষকের অভিযোগ বিস্তর। কৃষকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও উদাসীনতার কারনে কৃষকের পকেট কাটছে বরেন্দ্র গভীর নলকূপের অপারেটররা।
জাতাইর গ্রামের কৃষক গোলাম মাওলা বলেন, তিনি বরেন্দ্রের আওতায় ইরি বোরো মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। তিনি বরেন্দ্রর রিচার্জের মাধ্যমে পানি সেচার বিষয়টি জানেন না। বরেন্দ্রর অপারেটর সাজা মিয়া প্রতি বিঘা জমিতে পানি সেচের জন্য তার থেকে দুই হাজার টাকা নেয়।
একই এলাকার কৃষক বেলাল হেসেন বলেন, বরেন্দ্র গভীর নলকূপে রিচার্জের মাধ্যমে ঘন্টা চুক্তি পানি পাবে কৃষক, সেটি আজকেই জানলাম। এর আগে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কিংবা অপারেটররা কৃষকদের বলেনি। একারনে বরেন্দ্রের সুযোগ সুবিধা এই এলাকার কৃষকেরা পায়না। আমি এ বছর তিন বিঘা জমিতে ইরি বোরো ধান লাগিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বরেন্দ্রর অপারেটর ডুগুরপাড়া এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে সাজা মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার কৃষকেরা রিচার্জ কার্ড নেয়না। তাই প্রতি বিঘা ২০০০ হাজার টাকা করে নিচ্ছি। তবে কৃষকেরা বলছেন অন্য কথা। রিচার্জ কার্ডের বিষয়ে কিছু জানেন না তারা।
জানাগেছে, উপজেলা বরেন্দ্র কার্যালয় ও গভীর নলকূপ এলাকার প্রভাবশালীদের যোগসাজসে প্রতিটি সেচ এলাকায় ১০/১২ জনের একটি শক্তিশালি সেন্টিকেট গড়ে তুলেছেন। এই সেন্টিগেট গভীর নলকূপ এলাকায় সেচ নিয়ন্ত্রন করেন এবং কৃষকদের জিম্মি করে ইরি বোরো মৌসুমে কার্ডের মাধ্যমে পানি না দিয়ে চুক্তি করেছেন। এক বিঘা জমিতে সেচের জন্য কৃষকের কাছ থেকে এলাকা ভেদে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের এলাকায় কার্ডের মাধ্যমে পানি দেওয়া হলে এত টাকা লাগবে না। তবে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছেন, অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি তারা জানেন না।
পাঁচবিবি উপজেলা বরেন্দ্রর উপ সহকারী প্রকৌশলী সালাউদ্দীন বলেন, কৃষকদের সুবিধার্তে উপজেলায় সরকারি ৮১টি বরেন্দ্র গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। আর এসব বরেন্দ্রতে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। বরেন্দ্র নিয়ম অনুযায়ী একজন কৃষক ১১০ টাকা রিচার্জের মাধ্যমে বরেন্দ্র থেকে সরাসরি এক ঘন্টা পানি সেচ দিতে পারবে। আর এখান থেকে ১০ কমিশন পাবে অপারেটরা। আর এই টাকা সরকারি খাতে জমা হবে। আর যদি কোনো অপারেটর কৃষকদের থেকে বেশি টাকা নেয় তাহলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.