জাতীয় পরিচয়পত্রে অস্বাভাবিক বয়স কমিয়ে নিয়োগের অভিযোগ
প্রকাশের তারিখঃ ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের সরকার বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে আয়া পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়,জাতীয় পরিচয়পত্রের সবকিছু অপরিবর্তিত রেখে জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স কমিয়ে অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট দিয়ে আয়া পদে চাকরি নেয় সেলিনা আক্তার নামে এক প্রার্থী।
সেলিনা আক্তার ওই প্রতিষ্ঠানে গত ১৪ই মে ২০২২ইং তারিখে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানের আপন ছোট বোন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে তার প্রথম জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্ম তারিখ ১০ ডিসেম্বর ১৯৮২ইং এবং চাকুরীরত প্রতিষ্ঠানে আবেদনকৃত জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্মতারিখ ১০ডিসেম্বর ১৯৯০ইং। অভিযোগের পরে জাতীয় পরিচয় পত্রের অসঙ্গতির বিষয়ে সেলিনা আক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি তার জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সের গড়মিলের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি আরো বলেন তার বড় ভাই ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের আমার বয়সের গড়মিলের বিষয় টা সম্পর্কে বলতে পারবেন। সেলিনা আক্তারের কাছে তার পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি শুধু ২০০৩ সালে সিঙ্গারডাবড়ীহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পাশ করেছেন বলে জানান।
এদিকে সেলিনা আক্তারের শিক্ষা জীবন নিয়ে প্রতিবেদকের হাতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। একাডেমিক তথ্য মতে সেলিনা আক্তার ১৯৯৮ইং সালে তিস্তা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় ফার্স্ট ডিভিশনে এসএসসি পাস করে। এবং কাউনিয়া গাজীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও ভোকেশনাল কলেজ থেকে ২০০৮ইং সালে এইচএসসি পাস করেন। যার সবগুলোতে জন্ম তারিখ ১০ ডিসেম্বর ১৯৮২ ইং পাওয়া গেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে জন্ম নিবন্ধন সূত্রে সেলিনা আক্তারের জন্ম তারিখ ১০ ডিসেম্বর ১৯৮২ ইং জানা গেছে। কাজী অফিস থেকে তার বিবাহ নিবন্ধন তথ্যে পাওয়া গেছে সেলিনা আক্তারের বিয়ে হয় ২১ নভেম্বর ২০০৩ ইং সালে,নিবন্ধনে উল্লেখ করা জন্ম তারিখ মোতাবেক সেলিনা আক্তারের বয়স হয়েছিল ২০ বছর। সে হিসেব মতে সেলিনা আক্তারের চাকুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হবার দিনে বয়স হয় ৩৯ বছর। চাকরির সুবাদে ৮ বছর বয়স কমিয়ে ৩১ বছর বয়স দেখিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়ায় পুরো এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী বিসামিত্র সহ এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করেন।
এবিষয়ে-সিঙ্গারডাবড়ী হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তারের বড় ভাই আরিফুল ইসলামের কাছে সেলিনা আক্তারের অষ্টম শ্রেণি পাশের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে তিনি তা সময় সাপেক্ষে দেখাবেন বলে জানান।
বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানার জন্য সরকার বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন বয়স কমিয়ে অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ কিভাবে সিঙ্গারডাবড়ী হাট উচ্চ বিদ্যালয় দিল সেটার জবাব ওই বিদ্যালয় দিবে।এ সংক্রান্ত যেকোনো জবাব সেলিনা আক্তার দিবে বলে জানান তিনি।
রাজারহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি,তদন্ত সাপেক্ষে অসঙ্গতি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শামছুল আলমের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,একটা অভিযোগ পেয়েছি,বিষয়টি বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠিয়ে তদন্ত করার ব্যবস্থা করবো। তদন্তে জালিয়াতি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।