|| ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
উপজেলা ভোটে কাউকে নৌকা না দেওয়ার ভাবনা
প্রকাশের তারিখঃ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপর যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলটির নেতাদের ভাষ্য, তৃণমূলের রাজনীতিতে বিভাজন ঠেকাতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার বিষয়ে তারা ভাবছেন।
জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচন হওয়ার পর আগামী সপ্তাহেই প্রথম ধাপে শ 'খানেক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এই ভোট হতে পারে রোজার আগেই, আগামী মার্চে। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, এবার চার থেকে পাঁচ ধাপে উপজেলার ভোট হতে পারে।স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে নাকি প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়া হবে তা নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে না পারলেও বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়া হবে কিনা বা প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করে ২০১৫ সালে দলীয় প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এরপর থেকে ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ বাড়ছে এবং বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। শুধু ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০২১ ও ২০২২ সালে এক হাজার ৪২৮টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যাতে ১৭ হাজার ২৮১ জন আহত এবং ২৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
এছাড়া স্থানীয় সরকারে দলীয় প্রতীক দেয়ার তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়েও বিতর্ক চলছে।
২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন প্রণয়নের পর থেকে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিপাকেও পড়তে হয়েছে। অতীতে একজনকে প্রতীক দিলে আরেকজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন।
তাতে দলীয় শৃঙ্খলা যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনই তৃণমূলে বিভেদ-বিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিপাকে পড়তে হয় প্রার্থী বাছাই নিয়ে। একেক নেতা একেক প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় কোথাও কোথাও পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়িয়েছে।
সবশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদ দুটি উন্মুক্ত রেখেছিল আওয়ামী লীগ।
দলটির জ্যেষ্ঠ এক নেতা বলেন, “বিএনপি নির্বাচনে না এলে তখন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতারাই দাঁড়িয়ে যায়। যার ফলে তৃণমূল নেতারা অনেক ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন।
“এ কারণে নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে।”বা ৯ মার্চ থেকে উপজেলা নির্বাচন শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বছর পাঁচ ধাপে ৪৯২ উপজেলা পরিষদের মধ্যে ৪৫০টিতে নির্বাচন করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ৬৯ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১২৫ উপজেলা; তৃতীয় ধাপে খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ১১১ এবং চতুর্থ ধাপে বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫৯ উপজেলার ভোট গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতেও দলীয় প্রার্থীর বাইরে বিকল্প প্রার্থী রাখার নির্দেশনা এসেছিল আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে। এক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থীদের অতীতের মত বিদ্রোহী তকমা দেওয়া হয়নি; স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে কোনো ব্যবস্থা যে নেওয়া হবে না, সে কথাও আগে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আর তাতে ২৯৯ আসনের মধ্যে ৬২ আসনে জয় পানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
ভোট বর্জন করে আসা বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও আসবে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
বুধবার বিকালে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথসভা হবে। সেখানেই স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে মতামত নেওয়া হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে কি না- এমন প্রশ্নে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “আগামীকাল আমাদের সভা আছে, সভার আগে কিছু বলা যাবে না।”
আগামী উপজেলা নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিবে কি না, এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমাদের দলের পক্ষে প্রার্থী না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেটা আমাদের আলোচনা হলে জানতে পারবেন।”
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.