|| ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ || ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
সীতাকুণ্ডে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ
প্রকাশের তারিখঃ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে যথাযগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে।
৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন, সীতাকুণ্ড মডেল থানা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড।
এ ছাড়া সকাল ৮টায় সীতাকুণ্ড সরকারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্যারেড সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ গ্রহণ করে পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, গ্রাম প্রতিরক্ষা দল, বিএনসিসি, গালর্স গাইর্ড , ক্যাডেট কোর, সীতাকুণ্ড উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন, এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীতাকুণ্ড সার্কেল) এবি এম নাহিয়ানুল বারী ও সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইসচার্জ কামাল উদ্দিন কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দিনটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা সভায় সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপস্থ যুদ্ধকালীন থানা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী সিরাজুল আলম, সীতাকুণ্ড উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি, পৌরমেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বদিউল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলাউদ্দিন, সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন সাবেরী, বীর মুক্তিযোদ্ধারা সহ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন দপ্তরের নেতৃবৃন্দ। এ সময় বক্তৃতারা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালী জাতি পরাধীনতার শেকল ভেঙে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। ২৪ বছরের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতির ভাগ্যকাশে দেখা দেয় এক নতুন সূর্যোদয়। মহামুক্তির আনন্দঘন এই দিনে এক নতুন উল্ল্যাস জাতিকে প্রাণ সঞ্চার করে সজীবতা এনে দেয়। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালী চোখে আনন্দ অশ্রু আর ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। সেই হিসাবে বিজয়ের ৫৩ বছর পূর্তির দিন। জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ একাত্তর ঘুমন্ত জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালী নিধনযজ্ঞ, মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্ত সূর্যকে ছিনিয়ে আনবে বলে অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয়ে থাকে এ লড়াইয়ে। যতই দিন অতিবাহিত হতে থাকে আরও শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালী। ডিসেম্বর শেষ পর্যায়ে এসে চূড়ান্ত রূপ নেয় এই যুদ্ধের। অবশেষে ৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালী জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হলো মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। এর মধ্য দিয়ে এলো হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বাঙালী জাতি এদিন অর্জন করে তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা ধরা দেয় বাঙালীর জীবনে।
অন্যদিকে সকাল ১১টায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সীতাকুণ্ড রিপোর্টার্স ক্লাব, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, রাজনৈতিক সংগঠন সহ সর্বস্তরের জনগণ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযোদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাজনৈতিক সংগঠন গুলোর মধ্যে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্র লীগ, শ্রমিক লীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, ব্ঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, মহিলা লীগ, জাতীয়পার্টি, বিএনপি। উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিছিল স্লোগানের মাধ্যমে শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড, চসিক) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এস এম আল মামুন। এসময় তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবস, বাঙালী জাতির হাজার বছরের বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ১৬ ডিসেম্বর। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ্ আল বাকের ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলসাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম তাজুল ইসলাম নিজামী, ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর, ইউপি চেয়ারম্যান ও বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ছাদাকাত উল্যাহ মিয়াজী, ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজীজ, ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাহার, ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমেদ, ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাঈদ মিয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান, সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্র লীগের সভাপতি শিয়াব উদ্দিন, আইন সম্পাদক আতিকুল মান্নান জামশেদ, কৃষি সম্পাদক শফিউল আলম মুরাদ সহ প্রমুখ।
Copyright © 2024 দৈনিক বাংলার অধিকার. All rights reserved.